আলোচনায় শত শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, সমাধান হয়নি আজও
বছর ঘুরে নতুন বছর দরজায় কড়া নাড়ছে আর বিদায় ঘণ্টা বাজছে অসংখ্য ঘটনার জন্মদাতা ২০১৭ সালের। পুরনো বছরের স্মৃতি থেকে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সবাই। এ স্মৃতির বাঁকে পড়ে থাকে অনেক ঘটনা। যেগুলো অনেকটা কষ্টের। আবার সফলতার কিছু ঘটনা নতুন বছরে চলার পথে প্রেরণা দেয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০১৭ সালে বেশ কিছু সফলতা আর সমালোচনা জন্ম দিয়ে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল। বছরের শুরু থেকেই আলোচনার শীর্ষে ছিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগের ১০০ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল আবার আদালতের রায়ে তাদের ভর্তি বহাল।
তবে এর সমাধান আসেনি আজও। বছরটি চরম অনিশ্চয়তা আর হতাশায় কেটেছে এ ১০০ শিক্ষার্থীর। প্রশাসনেরও মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ ছিল তারা। আইনি লড়াইয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়েরও খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। রিভিউ আবেদনসহ সব কাজ সমাপ্ত করতে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসক এবং আইন ও শরিয়াহ অনুষদের ডিন অধ্যাপক রেবা মন্ডল।
তবে শেষ অবধি রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন আইন বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত ‘এফ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর। পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের গুঞ্জন ওঠে।
এরই প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৩তম সিন্ডিকেট এফ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল এবং পুনঃভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একইসঙ্গে ওই ইউনিটের সমন্বকারী নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ভর্তি বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসনের একরোখায় আন্দোলন থেকে পিছু হটে আইনের আশ্রয় নেয় তারা। ওই সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শোকজের শিকার হয়েছিলেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের রিটের প্রেক্ষিতে ১৩ মার্চ সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ২ মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করে হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আপিলে প্রেক্ষিতে আদালতের সিদ্ধান্তে ১৬ মার্চ পুনঃভর্তি পরীক্ষা নেয় কর্তৃপক্ষ।
এ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে আবার ১০০ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে ক্লাস নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে গত ২২ নভেম্বর সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আপিল খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ফলে প্রথমে ভর্তি হওয়া ১০০ শিক্ষার্থীর ভর্তি বহাল থেকে যায়। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিভিউ আবেদন করে। এতে ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে এখনও কোনো সমাধান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ১০০ শিক্ষার্থী। আবার শেষ পর্যন্ত তাদের কোন সেশনে ভর্তি করা হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
এদিকে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই ইউনিট সম্বয়কারী ও গণিত বিভাগের তৎকালীন সভাপতি সহকারী অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে সিন্ডিকেট পদাবমনন করে প্রভাষক করা হয়। একই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মনোজিৎ কুমারের সার্টিফিকেট বাতিল করে এবং ক্যাম্পাস অভ্যন্তরের তার ফটোকপির দোকানটি সিলগালা করে দেয় প্রশাসন।
আইন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক শাহজাহান মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল না করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে ভর্তি বাতিল করলে আদালতের রায় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যেত না। শেষ অবধি ওই শিক্ষার্থীদের পক্ষেই আদালতের রায় হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী জাগো নিউজকে বলেন, আমারা সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়া হবে।
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/জেআইএম