তাপস হত্যার আসামির আত্মসমর্পণে ছাত্রলীগের সন্দেহ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী তাপস হত্যা মামলায় প্রধান আসামি আশরাফুজ্জামান আশার আত্মসমর্পণের পেছনে কালো ছায়ার হাত রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে চবি ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। আইনের ফাঁক গলে আশা যাতে জেল থেকে বের হতে না পারে এবং অন্যান্য আসামিদের শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি উত্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থগিত কমিটির ছাত্রলীগের একাংশ সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার) গ্রুপের নেতারা। ছাত্রলীগের এ অংশটি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ৬ দফা দাবি জানিয়ে বলেন, তাপস হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত, স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি তাদের দলীয় পদ-পদবী বাতিলের জোর দাবি জানান। এছাড়া তাপসের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এবং তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মৃতি ফলক স্থাপনে প্রশাসনকে অনুরোধ জানান।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্থগিত কমিটির এ নেতা আরো জানান, নৈতিকতার বিষয়টি চিন্তা করেই হত্যার বিচার জানিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যন্য হত্যাকাণ্ডেরও বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতি এনামুল হক আরাফাত, নাসিরুদ্দিন সুমন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শরীফুল ইসলাম ও উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক সায়ন দাশ গুপ্ত।
প্রসঙ্গত, বুধবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করে মামলার প্রধান আসামি আশারাফুজ্জামান আশা। আদালত তার আবেদন না মঞ্জুর করে, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ফেরার সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের ট্রেনের বগিভিত্তিক দুই সংগঠন ‘ভি-এক্স’ ও ‘সিএফসি’। এ সময় শাহজালাল হল থেকে একপক্ষের ছোড়া গুলিতে আহত হন শাহ আমানত হলের তৃতীয় তলায় থাকা তাপস সরকার।
পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সংস্কৃত বিভাগের এই শিক্ষার্থী। হত্যাকাণ্ডের পর সিএফসি গ্রুপের পক্ষ থেকে তাপসকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করা হয়। ঘটনার দুদিন পর তাপসের বন্ধু, একই বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। কিন্তু এরপরেই আসামিরা গা ঢেকে দেন।
পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী দল চট্টগ্রামের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০১৬ সালের ২ মে আদালতে চবি ছাত্রলীগের ২৯ জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। যেখানে সাবেক সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আশারাফুজ্জামান আশাকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে আশা ছাড়া সকলেই জামিন নিয়ে পরবর্তীতে বের হয়ে যায়। বর্তমানে মামলার ১৩ জন আসামি পলাতক হিসেবে রয়েছে।
আবদুল্লাহ রাকীব/এফএ/এমএস