ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

মিলনের খোঁজ না হলে জবি অচলের হুমকি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | জবি | প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৭

৫০ দিন ধরে নিখোঁজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাদিকুল ইসলাম মিলনের সন্ধান দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তার সহপাঠীরা।

এতে শনিবারের মধ্যে মিলনকে খুঁজে বের করে তার অবস্থান নিশ্চিত করতে তারা পুলিশ ও প্রশাসনকে সময় দিয়েছেন। তা না হলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ ক্যাম্পাস অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।

বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীন মিনারের সামনে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এ মানবন্ধনের আয়োজন করেন।

কর্মসূচির শুরুতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ফটক থেকে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুন নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারের সামনে তারা মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্র রাসেদ বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে জানতে পেরেছিলাম মিলন ডিবি পুলিশ হেফাজতে আছে। তাই আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে তথ্যটা ভুল ছিল। এখন মিলন কোথায় এটা তারা জানেন না। এমনকি পুলিশও নাকি স্বীকার করছে না যে মিলন তাদের হেফাজতে আছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কেন তখন ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যে সান্ত্বনা দিলেন?

এদিকে একমাত্র পুত্রের কোনো সন্ধান না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিলনের মা-বাবা। প্রায় দুইমাস হয়ে গেছে কিন্তু পুলিশ, ডিবি কেউ ছেলের কথা কিছু বলছে না বলে জানান তারা।

মানববন্ধনে নিখোঁজ মিলনের পিতা খয়রাত আলী বলেন, গত ২৩ মে রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আমার ছেলে সাদেকুল ইসলাম মিলনকে রাজধানীর আদাবর থানার ৫ রোডের ৭ নম্বর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আদাবর থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের সঙ্গে ডিবি পুলিশ পরিচয়দাতাদের কোনো সংযোগ নেই। সাদেকুল ইসলাম মিলন নামের কোনো ব্যক্তি তাদের হেফাজতে নেই। এভাবে আজ ৫০ দিন হলো কিন্ত কোনো খোঁজ নেই আমার ছেলের। পুলিশ শুধু বলে মিলনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

এসময় পুত্র নিখোঁজের আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিখোঁজ মিলনের পিতা খয়রাত আলী।

মানববন্ধনে জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন,  ‘জবি প্রশাসন এ বিষয় নিয়ে তালবাহানা শুরু করেছেন। উনারা ইচ্ছে করলে খুব দ্রুতই নিখোঁজ মিলনের সন্ধান মিলবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছে করলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন নিখোঁজ মিলনের সন্ধানের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব মিলনকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া।

মিলনের বন্ধু সুলাইমান বলেন, ‘মিলন যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। কিন্তু কাউকে গুম করে ফেলা তো কোনো বিচারের মধ্যে পড়ে না। মিলন যদি পুলিশ হেফাজতে থেকে থাকে তাহলে পুলিশ তা স্বীকার করুক, না হলে কোথায় আছে তা খুঁজে বের করুক। পুলিশ ও প্রশাসন যদি শনিবারের মধ্যে মিলনকে খুঁজে বের করে তার অবস্থান নিশ্চিত না করে তাহলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ ক্যাম্পাস অচল করে দেয়া হবে।

এদিকে মানববন্ধনে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কোনো শিক্ষককে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনো শিক্ষক অংশগ্রহণ করেননি। এতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে।

মিলনের বিষয়ে আদাবর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘটনার পর নিখোঁজ মিলনের পরিবার আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু আমাদের কাছে এখনো তার কোনো খোঁজ নেই। তবে আমরা তাকে খোঁজে বের করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওইদিন ডিবি পরিচয়ে ঠিক কারা বাসায় গিয়ে মিলনকে ধরে নিয়ে গেছেন তাদের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করছি।

ঘটনার পর ৫০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন নিখোঁজ মিলনের সন্ধান মেলেনি? জানতে চাইলে এসআই মামুন বলেন, একেবারে সঠিক তথ্য না পেয়ে আমরা কোনোকিছু বলতে পারছি না, আমরা ডিএমপি কমিশনার পর্যন্ত এ বিষয়ে কথা বলেছি এবং সবগুলো গুয়েন্দা বিভাগে তদারকি চালাচ্ছি। কোনো খোঁজ পাওয়া মাত্রই তার পরিবারকে জানানো হবে।

এ ব্যাপারে মিলনের বিভাগের শিক্ষক ও শুরু থেকে এ ঘটনার তদারককারী অধ্যাপক নূরে আলম আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আসলে আমরা ছাত্রছাত্রীদের মুখে শুনেছিলাম ওকে (মিলনকে) নাকি প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত ব্যাপারে আটক করা হয়েছে। তাই নীতিগত কারণে আমরা মানববন্ধনে অংশ নেইনি। যেখানে আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী স্পষ্টভাবে স্বীকারই করছে না আদৌ মিলনকে গ্রেফতার করেছে কি না সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলছে না, সেখানে গ্রেফতারের কারণ অনুমান করেই নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর পাশে কেন থাকছেন না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানববন্ধনে অংশ নেয়ার চেয়েও উদ্ধার করাটা জরুরি আমরা সে চেষ্টা চালাচ্ছি।

জবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপরতা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত চিঠিও পাঠানো হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মানববন্ধনকেও আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আমাদের প্রশাসনের তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।

উল্লেখ্য, গত ২৩ মে ভোররাতে মোহাম্মদপুরে আদাবর থানার ৫ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ি থেকে আ্ইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কয়েকজন মিলনকে তুলে নিয়ে যান।

আটকের খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার করলে পরদিন মিলনের পরিবার আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তার সতীর্থরা ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানালে প্রক্টর নূর মোহাম্মদ ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূরে আলম আব্দুল্লাহ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের জানান যে মিলন ডিবি হেফাজতে আছে। এতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্ত হয়। কিন্তু ডিবি কার্যালয়ে মিলনের মা-বাবা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মিলন তাদের হেফাজতে নেই বলে জানায় ডিবি কার্যালয়।

পরে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ওই বিভাগের শিক্ষক নূরে আলম আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, আগের তথ্যটি ভুল ছিল। পুলিশ স্বীকার করছে না যে মিলন তাদের হেফাজতে আছে।

এসএম/জেডএ/জেআইএম

আরও পড়ুন