ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবৈধ আবাসিক সুবিধায় বছরে ক্ষতি কোটি টাকা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | বেরোবি | প্রকাশিত: ০২:৫১ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নীতিমালা উপেক্ষা করে বিগত প্রশাসনের ক্ষমতাসীন কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অবৈধ আবদারে আবাসিক সুবিধা প্রদান করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এতে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১ কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানা গেছে। ক্যাম্পাসের আবাসিক ভবনগুলোর ভাড়া সরকারের বাড়িভাড়া নীতিমালা অনুযায়ী কর্তন না করায় প্রতি বছর এই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালের বাজেট পরীক্ষক দল তাদের রিপোর্টে এ অসঙ্গতির কথা তুলে ধরলেও তা এখন পর্যন্ত তোয়াক্কা করেনি প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ইউজিসির তদন্ত দল।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পরীক্ষক দলের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯টি অসঙ্গতির মধ্যে প্রথম অসঙ্গতি হিসেবে বাড়িভাড়ায় অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে বসাবসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের নিকট থেকে বিধিবর্হিতভাবে নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া কর্তন করা হয়। তদন্ত দল সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাড়িভাড়া কর্তন করার জন্য অনুরোধ করে।

২০২১-২২ অর্থ বছরের পর্যবেক্ষক দল ১৭টি আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায়, সেখানে ২ নম্বরে একই অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১৭ এর উপ অনুচ্ছেদ(২) অনুসরণপূর্বক কোয়ার্টারে বসবাসরতদের নিকট হতে পূর্ণ বাড়িভাড়া কর্তন করার অনুরোধ করেন এবং সেই সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ সুবিধাভোগীদের নিকট হতে আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে জমা করার জন্য বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১৭ এর উপ অনুচ্ছেদ(২) এ বলা আছে, যেসব কর্মকর্তা সরকারি বাসভবনে থাকবেন তারা বাসাভাড়া প্রাপ্য হবেন না। সে অনুযায়ী আবাসিক ভবনে বসবাসকারী শিক্ষক কর্মকর্তাদের বাড়িভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা আদায় না করে ৭৫০ থেকে ৮০০ স্কয়ার ফিটের বাসার জন্য নামমাত্র মূল্যে মাসিক ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা বাড়িভাড়া হিসেবে কর্তন করে থাকে। যেখানে মূল বেতনের ৪০%-৫৫% পর্যন্ত কর্তন করার কথা, সেখানে মাত্র ২০০০ টাকা কর্তন করাকে অবৈধ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ইউজিসির পর্যবেক্ষণ দল মোট ২৫টি আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায়। সেখানেও প্রথমেই বিধি বহির্ভূতভাবে বাড়িভাড়া কম কর্তনের কথা উল্লেখ করে বছরে ৭৫.২০ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জবাবে বলা হয়, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাসাভাড়া কর্তন করা হয়। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবাসস্থল নির্মিত না হওয়ায় সাময়িকভাবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সেখানেও ইউজিসি অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে, ইউজিসি তার ফিরতি চিঠিতে উচ্চ গ্রেডধারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসা বরাদ্দ না দিয়ে উক্ত বাসা নীতিমালা অনুযায়ী জুনিয়র শিক্ষক, কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দিতে বলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক বা জুনিয়র কর্মকর্তার মধ্যে কেউই বাসা বরাদ্দ পাননি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন নীতিমালা অমান্য করে আবারো আওয়ামীপন্থি ৫ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে ডরমিটরি বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ডরমিটরি বরাদ্দের নীতিমালায় অবিবাহিত প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক এবং সহকারী রেজিস্ট্রারদের বাসা বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও আইন লঙ্ঘন করে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে বরাদ্দের অভিযোগ আছে।

বিজ্ঞাপন

এমনকি সর্বশেষ নতুন উপাচার্য ড. শওকাত আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর বাসা বরাদ্দেও নীতিমালা লঙ্ঘন করে আওয়ামীপন্থি সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বাসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের আবাসিক হলে উচ্চ হারে ভাড়া আদায় করে শিক্ষক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কম ভাড়া আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈষম্য সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীরা যেখানে কোনো বরাদ্দ বা ভর্তুকি পায় না, সেখানে গুটি কয়েক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য বছরে কোটি টাকা গচ্ছা দেওয়ার কোনো মানে হয় না।

এ বিষয়ে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম আশিকুর রহমান বলেন, ২৪ এর বিপ্লবের পর যদি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি, অনিয়মগুলো ঠিক করতে না পারি সেটা হবে আমাদের বড় ব্যর্থতা। এখনো বিভিন্ন সেক্টরে রয়েছে অনিয়ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ভাড়া নেওয়া হয় ২৫০ টাকা যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করলে অনেক বেশি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী বলেন, আমি বিষয়টা দেখেছি। এ বিষয়ে ইউজিসির টিমের সঙ্গে কথাও হয়েছে। এজন্য নীতিমালা কমিটি করে দিয়েছি। নীতিমালা কমিটি এরইমধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই নীতিমালায় কোনো অধ্যাপক লেভেলের শিক্ষক থাকতে পারবেন না। জুনিয়র লেভেলের শিক্ষকরাই শুধু এখানে থাকবেন। আগামী এফসি ও সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আমি এই প্রস্তাবটি তুলবো। সেখানে ২০১৮ সালের সরকারি বাসা ভাড়ার যে আইন আছে সেই অনুযায়ী বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করবো।

তিনি আরও বলেন, আগের উপাচার্যের আমলে যেসব শিক্ষক কর্মকর্তা উঠেছেন তারাই আছেন। তারা যেভাবে করেছেন সেভাবে হয়েছে। সহকারী প্রফেসর হিসেবে ঢুকেছেন প্রফেসর হওয়ার পরও থাকছে। তাদের কে আমি নোটিশ পাঠিয়ে দিয়েছি।

ফারহান সাদিক সাজু/এফএ/জিকেএস

বিজ্ঞাপন