কুমড়া জাতীয় ফসলের পাতা হলুদ হলে করণীয়
মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, টমেটো, চাল কুমড়া, লিচু, আম, কুল, করলা, লাউ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা এবং কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া সমস্যাটি দেখা যায়। মিষ্টি কুমড়া, পটোল, তরমুজ, ক্ষিরা, সরিষা, লাউ, চাল কুমড়া, করলা, ধুন্দল, শসা, ফসলের পাতা হলুদ হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে বাংলাদেশের কুমড়া জাতীয় ফসল হলুদ হওয়ার প্রধান কারণ হলো ডাউনি মিলডিউ। যা মূলত এটি ছত্রাকজনিত রোগ।
পাতা হলুদের কারণ
পুষ্টিজনিত ঘাটতির কারণে, জলাবদ্ধতার কারণে, অতিরিক্ত সেচ, পানি স্বল্পতা, ছত্রাকজনিত রোগ, পাউডারি মিলডিউ ও ডাউনি মিলডিউ, ভাইরাসজনিত মোজাইক ভাইরাস, পোকামাকড়ের আক্রমণে এফিড ও হোয়াইটফ্লাই গাছের রস শুষে খায় এবং এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়ায়। উল্লেখিত এসব কারণে কুমড়া জাতীয় গাছ হলুদ হয়ে থাকে।
ডাউনি মিলডিউ
ডাউনি মিলডিউ মূলত ছত্রাকজনিত রোগ। কুমড়া জাতীয় ফসলে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কৃষক তথা মাঠ পর্যায়ে ডাউনি মিলডিউ নামের রোগটি প্রচণ্ডভাবে ক্ষতি করে থাকে। আজ আমরা মূলত কুমড়া জাতীয় ফসলের এই ডাউনি মিলডিউ রোগটি নিয়ে আলোকপাত করবো।
রোগের লক্ষণ
বয়স্ক পাতায় এ রোগ প্রথম দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামি রঙের তালির মতো কোনাকুনি দাগ দেখা যায়। পাতার নিচের দিকেও অনুরূপ দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত গাছের ফুল ও ফল কম হয় এবং ফল স্বাদহীন হয়। আক্রান্ত বেশি হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায়। পাতাগুলো ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যায় এবং শেষমেশ শুকিয়ে যেতে থাকে। রোগটি ফুলের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে ফুলগুলো বিকৃত হতে পারে এবং গাছের সাধারণ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
আক্রমণের সময়
শীতল রাত ও উষ্ণ দিনের আবহাওয়ায় পাউডারি মিলডিউ বেশি ছড়ায়। খরা বা কম বৃষ্টিপাতের সময়। নাইট্রোজেনের অতিরিক্ত ব্যবহারে। আলো-বাতাস চলাচলের অভাব থাকলে। এ রোগ ছড়ানোর উত্তম সময়, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। শীতে এই রোগ বেশি দেখা যায়। ফসলের ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। ফসলের ক্ষেতের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকা এবং আগাছা পরিষ্কার না করলেও এ রোগের বিস্তার ঘটতে পারে।
জৈব ব্যবস্থাপনা
আগাম বীজ বপন করা। প্রতিরোধী জাত ব্যবহার, আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ না করা। ক্ষেতে মালচিং পেপার ব্যবহার করা, মাটি চাষ দিয়ে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়া, মাটিতে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করা, ঠান্ডা সহনশীল জাত চাষ করা। ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা, গাছের চারপাশে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা, বেকিং সোডা স্প্রে: এক চামচ বেকিং সোডা এবং এক লিটার পানির মিশ্রণ স্প্রে করলে রোগের প্রকোপ কমতে পারে। নিম তেল স্প্রে করা, এক কেজি পেঁপে পাতা কুচি কুচি করে কেটে এক লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে এবং ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তাতে ১০ লিটার পানি যোগ করে ছেঁকে নিয়ে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত পাতাগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলা, ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে হবে। সুষম সার ব্যবহার করা এবং নিয়মিত ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করা।
রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা
১. প্রথম লক্ষণ দেখামাত্রই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ শুরু করা।
২. মেনকোজেব গ্রুপের (স্পর্শক) ছত্রাকনাশক ২-৩ দিন পর পর প্রয়োগ করা।
৩. কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের অন্তর্বাহী ছত্রাকনাশক ৭ দিন পর পর প্রয়োগ করা।
৪. এজোক্সিস্ট্রাবিন ও সিপ্রোকোনাজল (সিস্টেমিক) বহুমুখী গুণসম্পন্ন ছত্রাকনাশক ৭ দিন পর পর প্রয়োগ করা।
সতর্কতা
১. অতিরিক্ত ছত্রাকনাশক (স্পর্শক) স্প্রে করলে ফুল-ফল ঝরে যেতে পারে।
২. অতিরিক্ত ছত্রাকনাশক (সিস্টেমিক) স্প্রেতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
৩. ছত্রাকনাশক বৃষ্টিতে ধুয়ে গেলে কাজ করবে না।
৪. যে কোনো রাসায়নিক স্প্রেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
এসইউ/জিকেএস