লটকন চাষে সফল টাঙ্গাইলের স্কুলশিক্ষক শামছুল
লটকন চাষে সফল টাঙ্গাইলের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক শামসুল আলম। এ অঞ্চলে লটকন চাষের ব্যাপকতা না থাকলেও ফলনে সফলতার মুখ দেখছেন এই কৃষক। মাত্র আড়াই হাজার লটকন গাছ থেকে গত বছর ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে ফলন ও বিক্রি ভালো হওয়ায় টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন তিনি।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি এলাকা রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আলম। তিনি ঘাটাইল সালেহা ইউসুফজাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। রোপনকালে কিছু মূলধন খাটলেও এর পরিচর্যায় তেমন একটা ব্যয় না থাকায় লটকন চাষ সম্ভাবনাময় বলে দাবি করছেন তিনি।
শামসুল আলম জানান, ২০১৪ সালে নরসিংদীতে গিয়ে লটকন বাগান দেখেন। সেখানকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করেন। উৎপাদিত চারা বাড়ির পাশের সাড়ে ৭ একর জমিতে রোপণ করেন। ৫-৬ বছর পর কিছু গাছে ফল আসতে শুরু করে। অন্যদিকে ২ হাজারের বেশি গাছ পুরুষ হওয়ায় কেটে ফেলতে হয়। বর্তমানে বাগানের আড়াই হাজার গাছে ফল হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লটকন। বিভিন্ন এলাকা থেকে ফল ব্যবসায়ীরা আসছেন লটকন কিনতে। ব্যবসায়ীরা বাগানে ঢুকে গাছ থেকে ইচ্ছেমতো লটকন সংগ্রহ করছেন। চাষি শামসুল আলম বসতঘরের সামনে বসে ওজন করে সেগুলো পাইকারি বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন
পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে আরবের আলুবোখারা
পেয়ারা গাছ রোপণের পদ্ধতি
টাঙ্গাইলের ফল ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, ‘বাগানের লটকন নরসিংদীর লটকনের মতো সুস্বাদু। ৭০ টাকা কেজি দরে লটকন কিনেছি। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে পরিবহন বাবদ খরচ আছে আরও পাঁচ টাকা। টাঙ্গাইলে এই লটকন ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।’
ঘাটাইলের ফল ব্যবসায়ী শরীফ বলেন, ‘নরসিংদী থেকে লটকন আনতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। এখন বাড়ির কাছেই উন্নতমানের লটকন হচ্ছে। গত বছর থেকে শামসুল আলমের বাগান থেকে লটকন নিয়ে বিক্রি শুরু করি। মৌসুমে দুইদিন পরপর দু-তিন মণ লটকন বিক্রি করি। আশপাশের জেলা-উপজেলার ব্যবসায়ীরা তার বাগান থেকে লটকন কিনতে আসেন।’
শামসুল আলম বলেন, গাছ রোপণের পর পরিপূর্ণ বড় হতে প্রায় ১০ বছর লেগে যায়। তারপর থেকে ফলের উৎপাদন বাড়তে থাকে। প্রথমে যখন বাগান করি; তখন অনেকেই নিরুৎসাহিত করেন। অনেকে বলেছেন, আমাদের অঞ্চলে এর ভালো ফলন হবে না। তবে হাল ছাড়িনি। প্রমাণ করেছি, আমাদের এলাকায় লটকন চাষ সম্ভব। লটকন চাষে তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। এ কারণে লটকন উৎপাদনে খরচ কম।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবীর হোসেন বলেন, ‘এ অঞ্চলের মাটি লটকন চাষের উপযোগী। শামসুল আলমকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকন চাষের সম্ভাবনা আছে।’
এআরটি/এসইউ/