পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে আরবের আলুবোখারা
আদা, হলুদ, কলা ও কাঁঠালের উৎপাদন ভূমি খ্যাত পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে মসলা জাতীয় ফসল আলুবোখারা। প্রথমবারের মতো আলুবোখারা চাষে সফল হয়েছেন খাগড়াছড়ির কৃষক ম্রাসাথোয়াই মারমা। ম্রাসাথোয়াই মারমা ছাড়াও অনেকেই আলুবোখারা চাষে ঝুঁকছেন।
পাহাড়ি জনপদে আরবের আলুবোখারা চাষে সাফল্য হাতছানি দিলেও হতাশ কৃষক ম্রাসাথোয়াই মারমা। আলুবোখারা প্রক্রিয়াজাত করতে প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। আলুবোখারা প্রক্রিয়াজাত করতে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এ ফসল বিক্রি করে কৃষকেরা লাভবান হবে বলে মনে করেন এ কৃষক।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মিশ্র মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় ১২০টি আলুবোখারার গাছের চারা লাগান কৃষক ম্রাসাথোয়াই মারমা। উচ্চমূল্যের আলুবোখারা চাষ করলেও প্রক্রিয়াজাত করার প্রক্রিয়া না জানায় হতাশ তিনি। গাছের নিচে নষ্ট হচ্ছে বাগানের ফল।
আলুবোখরা মূলত বিদেশি ফল। এটি পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, সালাদ, জ্যাম, জেলি, আচার এবং বোরহানিসহ নানা অভিজাত খাবার তৈরিতে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে ফলটি সাধারণত ভারত থেকে আমদানি করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দিতে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে আলুবোখারার উন্নত জাতগুলো উদ্ভাবিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় শীত প্রধান ও অল্প উষ্ণ এলাকায় ব্যাপকভাবে আলুবোখারা চাষ হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ও ভারতে একে আলুবোখারা নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে উদ্ভাবিত বারি আলুবোখারা-১ জাতটি ২০১৩-১৪ সালে অনুমোদন করা হয়। এর গাছ মাঝারি আকারের, পাঁচ-ছয় মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে এর চাহিদা অনেক। দেশের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় প্রতি বছর। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়াজাত করতে না জানার কারণে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে আলুবোখারা।
আমাদের দেশে আলুবোখারা আমদানি নির্ভর জানিয়ে কৃষক ম্রাসাথোয়াই মারমা বলেন, ‘যেহেতু আমাদের পাহাড়ে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে, তাই দেশের টাকা দেশে রাখা সম্ভব হবে। প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সাধারণ কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিজ্ঞ করে তুলতে হবে। তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।’ পাশাপাশি দেশে আলুবোখারার বিদেশ নির্ভরতা কমবে বলেও মনে করছেন তিনি।
কৃষিবিদদের মতে, পাহাড়ের আবহাওয়া আলুবোখারা চাষে খুবই উপযোগী। পাহাড়ি অনাবাদি পতিত জমিতে চাষ করলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। বাড়ির উঠানেও এ ফল চাষ করা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উচ্চ পুষ্টিমান, সুগন্ধিযুক্ত এবং ভেষজ গুণের কারণে এটি বেশ সমাদৃত।
পাহাড়ে আলুবোখারা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা জানিয়ে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এটি তিন বছর বয়স থেকেই ফল দেওয়া শুরু করে। কৃষি বিভাগ উদ্ভাবিত আলুবোখারা বারি-১ জাতের এ ফল পর্যায়ক্রমে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তখন বিদেশ থেকে আলুবোখারা আমাদানি করতে হবে না।’ আলুবোখারা বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাত করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানান এ কৃষিবিদ।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/জিকেএস