৯২ হেক্টর জমি
ঝালকাঠির সুগন্ধি লেবুর চাহিদা সারাদেশে
ঝালকাঠির ২২টি গ্রামের ৯২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় সুগন্ধি কাগজি লেবু। ভিটামিন-সিযুক্ত রসালো লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা ঝালকাঠিসহ সারাদেশের বাজারগুলো। বাজারে বিভিন্ন জাতের লেবু বারো মাস পাওয়া গেলেও মৌসুমি এ কাগজি লেবুর চাহিদাই বেশি। সদর উপজেলার কৃষি অঞ্চল খ্যাত কীর্তিপাশা, নবগ্রাম ও গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামেই কাগজি লেবু চাষ হয়। গ্রামীণ হাট-বাজারে বিক্রি হলেও মূল মোকাম ভিমরুলী।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলীর ভাসমান লেবুর হাট চলতি মৌসুমে জমে উঠেছে। প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ লেবু বেচাকেনা হচ্ছে। পাইকাররা নৌকা থেকে লেবু কিনে গাড়িতে করে বরিশাল আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন। অনেকে মালবাহী ট্রলার বা ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত রসালো সুগন্ধি কাগজি লেবু সবার প্রিয়। বাউকাঠি, শতদলকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষণ্ডা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, কীর্তিপাশা, মিরাকাঠিসহ ২২টি গ্রাম এখন লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা। প্রতিদিন এসব গ্রামের কৃষকেরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় ভিমরুলী বাজারে নিয়ে আসেন। অপেক্ষমান পাইকাররা ট্রলারে বসেই লেবু কিনে রাখছেন।
লেবু চাষিরা জানান, অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। গত বছর ১ পোন (৮০টি) লেবু ছিল ২৫০ টাকা। এবার তা ৪০০ টাকা। গ্রামের কৃষকেরা সজ্জন পদ্ধতিতে (কাঁদি কেটে) লেবু চাষ করছেন। একেকটি কাঁদি ১০০ থেকে ১১০ হাত লম্বা এবং ৭-৮ হাত চওড়া হয়। প্রতিটি কাঁদিতে ২২ থেকে ২৫টি গাছ লাগানো যায়। এরকম ১ বিঘার কাঁদিতে লেবু চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ফল ধরার পরে প্রতি বছর লেবু বিক্রি করে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়া যায়। সে হিসেবে লেবু বিক্রি করে প্রতি বছর কৃষকেরা আয় করছেন দেড় থেকে ৩ কোটি টাকা।
লেবুর পাইকার আ. রহমান জানান, পটুয়াখালী থেকে মালবাহী ট্রলার এলে সেই ট্রলারে পটুয়াখালী মোকামে পাঠানো হয়। সেখানের কাঁচামাল বিক্রেতাদের সঙ্গে আগেই চুক্তি করা থাকে। কেনা দামের ওপর লাভ রেখে বিক্রি করা হয়। কাগজি লেবুর চাহিদা এবার অনেক বেশি। তাই কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য দিয়ে লেবু কিনে নেওয়া হচ্ছে। ভালো মানের একেকটি লেবু কেনা হচ্ছে ৫ টাকায়। যা খুচরা বাজারে ৭-৮টাকা দরে বিক্রি হয়।
লেবু চাষি বশির জানান, ঝালকাঠির এ লেবুর কদর সবার কাছেই সমান। ফলন ধরার পর দু’ভাবে লেবু বিক্রি করা হয়। প্রথমত স্থানীয় ভিমরুলী বাজারে পাইকারদের কাছে। এ ছাড়া গাছে ফল আসার পর পাইকারদের কাছে বাগান বিক্রি করা হয় এককালীন নগদ টাকায়। ভিমরুলী থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে পাইকাররা কিনে তা সরবরাহ করেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায়।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বছর জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৯২ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে লেবুর ফলন কম হলেও কৃষকেরা ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি। দেশীয় সুগন্ধিযুক্ত কাগজি লেবু ছোট হলেও ভেতরে পর্যাপ্ত রস থাকে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ লেবুর প্রতি সবারই কম-বেশি আকর্ষণ আছে। লেবু চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরিচর্যাসহ সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়। এ বছরও ৩ কোটি টাকার বেশি বিক্রির সম্ভাবনা আছে।’
মো. আতিকুর রহমান/এসইউ/জিকেএস