লিচুর বাম্পার ফলন
রাজবাড়ীতে দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা
এ বছর পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রাজবাড়ীতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। পোকামুক্ত মিষ্টি ও রসালো লিচু হওয়ায় কোনো ধরনের বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই বাগান থেকে পাইকারি দরে লিচু বিক্রি করে খুশি তারা।
চাষিদের দাবি, দিনাজপুর, ঈশ্বরদীসহ দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে রাজবাড়ীর লিচুর। ফলে বাগান থেকেই পাইকাররা লিচু কিনে নিয়ে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে খুচরা মূল্যে বিক্রি করছেন। এ বছর খরচের তুলনায় লিচুতে প্রায় ৫-৬ গুণ বেশি লাভ হচ্ছে। যা অন্য ফসলে হয় না। এদিকে লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে।
লাল ও হলুদ বর্ণের এ ফল রাজবাড়ীর লিচু বাগানগুলোর প্রতিটি গাছের সরু ডালে শোভা পাচ্ছে। বর্তমানে বাগান মালিকরা গাছ থেকে পাকা লিচু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। অনেক পাইকার বাগান থেকেই কিনে প্রক্রিয়াজাত করে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলায় প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। যার মোট উৎপাদন ধরা হয়েছে প্রায় ২৬০ মেট্রিক টন। রাজবাড়ীতে মুম্বাই, চায়না থ্রি, মোজাফ্ফর, কাঁঠালি, কদমি, বেদানাসহ বেশকিছু জাতের লিচু চাষ হয়েছে।
লিচু চাষি সোহাগ হোসাইন বলেন, ‘প্রথমে ৬টি গাছ দিয়ে শুরু করে এখন ১০০টি লিচু গাছ আছে। এ বছর খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। এ বছর লিচুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবো। সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩০০ টাকায় ১ হাজার লিচু বাগান থেকে পাইকারি দরে বিক্রি করছি। বাগানে মুম্বাই, মোজাফ্ফর, চায়না থ্রি, কাঁঠালি, কদমি লিচু আছে। বেশি লাভবান হওয়া যায় মুম্বাই লিচুতে।’
আরও পড়ুন
আরেক লিচু চাষি মান্নান হুদা বলেন, ‘প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে লিচুসহ বিভিন্ন মিশ্র ফলের বাগান করে আসছি। এ বছর ১ একর জমিতে লিচুর বাগান করেছি। এই জমিতে প্রায় ৪০০ লিচু গাছ আছে। বাগান পরিচর্যায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। বাগান থেকে এবার প্রায় ১১ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে। লিচু কীটনাশক ও পোকামুক্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বাগান দেখে অনেকেই লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’
লিচু ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চন্দনীর আফড়া এলাকার মান্নান হুদাসহ কয়েকজন বাগান থেকে সরাসরি লিচু সংগ্রহ করে নিজ হাতে বাছাই করে বাজারে নিচ্ছেন। এই লিচু যেমন বড়, তেমনই রসালো। এখন আর বাইরের জেলায় যেতে হয় না। রাজবাড়ীতেই সুস্বাদু এবং রসালো লিচু পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতাদেরও চাহিদা আছে। আমরা ১ হাজার লিচু বাগান থেকে পাইকারি দরে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করছি।’
চন্দনীর উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নারায়ণ মন্ডল বলেন, ‘চন্দনীসহ আশপাশের এলাকার মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী। এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। এ অঞ্চলের লিচুর বাজারে বেশ চাহিদা আছে। ফলে লিচু চাষে চাষিদের আগ্রহী করতে কাজ করছি।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান বলেন, ‘সদর উপজেলায় ১৬৩টি ছোট-বড় লিচু বাগান আছে। এসব বাগানে চায়না থ্রি, বেদানা, মোজাফ্ফরসহ বিভিন্ন জাতের লিচু হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে লিচুর চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। আগামীতে রাজবাড়ীতে লিচু চাষি ও বাগানের সংখ্যাও বাড়বে।’
রুবেলুর রহমান/এসইউ/জিকেএস