মরিয়মের শখের বাগান
৩৫০ টাকায় শুরু, বাগানে এখন লাখ টাকার গাছ
সিয়াম মাহমুদ
দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে স্নাতক শেষ করতেই পার করে দেন বছর চারেক; সেখানে স্নাতক শিক্ষার্থী মরিয়ম হাঁটলেন ভিন্ন পথে। পড়াশোনার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন বাগান। এরই মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছেন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।
করোনাকালীন মানুষ যখন গৃহবন্দি; মরিয়ম তখন দেখলেন বাগান গড়ার স্বপ্ন। ৩৫০ টাকার একটি গাছ নিয়ে বাগানের কাজ শুরু করেন। এরপর আর তার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ তার বাগানে রয়েছে লাখ টাকার গাছ। চালাচ্ছেন নিজের পড়াশোনার খরচ, পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিবারের। সরকারি তিতুমীর কলেজের চতুর্থ বর্ষের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মরিয়ম নাহার মৌ। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন কুমিল্লা থেকে। পরিবারের সঙ্গে নিজগ্রামেই থাকেন তিনি।
প্রথমে নিজেদের মাত্র ৩ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ শুরু করলেও বর্তমানে ১০ শতাংশ জমিতে মরিয়মের বাগান। মরিয়ম বলেন, ‘বর্তমানে স্যাকুলেন্ট, লিলি, জলগোলাপসহ প্রায় দেড়শ প্রজাতির ফুল ও ৬০ রঙের ঘাসফুল আছে আমার বাগানে। স্বাভাবিক সময়ে শুধু বাগানের ফুল, ঘাস ও গাছের চারা বিক্রি করেই প্রতিমাসে প্রায় ৬ হাজার টাকার মতো আয় হয়। তাছাড়া গাছের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক মৌসুমে ভালো একটা লভ্যাংশ থাকে।’
আরও পড়ুন
এ ছাড়া একই জমিতে মৌসুমি শাক-সবজি চাষ করেন তিনি। মরিয়ম বলেন, ‘শাক-সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি সবজি বিক্রি করে আয়ের পরিমাণ আরও বাড়িয়েছি। এতে লাভ দুইটি। ভেজালমুক্ত শাক-সবজি যেমন শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটাচ্ছে; তেমনই বাড়তি আয় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে।’
বাগান করার প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে পরিবার তেমন সমর্থন করেনি। পরে পরিবার আমার শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বাবা-মা আমার পাশে ছায়ার মতো আছেন। প্রথমদিকে কাছের কিছু মানুষ আমার বাগান করাকে হেয় করলেও পরে আর কিছু বলেননি। কারণ আজ আমি সফল। বলতে খুব গর্ব হয়, বাগান ব্যবসার সফলতার কারণে গ্রামেও বেশ পরিচিত হয়েছি।’
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য মরিয়ম বলেন, ‘কুমিল্লার ছোট্ট একটি গ্রামে আমার ছোট্ট বাগান। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, আজ তা পূর্ণ হলো। চেষ্টা আর ইচ্ছা থাকলে মানুষ সবকিছু করতে পারে। আমার ইচ্ছা, আমার মতো অনেক মেয়ে বাগান করে তার শখ পূর্ণ করুক এবং স্বাবলম্বী হোক। এ ছাড়া স্বপ্ন আছে, নিজের শখের বাগানকে আরও বড় করে অন্যদের কর্মসংস্থান তৈরি করা।’
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/জিকেএস