ফেনীতে টমেটো চাষে ব্যাপক লাভের আশা কৃষকের
উদয়ন প্লাস জাতের টমেটো চাষে ব্যাপক লাভের আশা করছেন কৃষক। বাজারদর ভালো, পরিশ্রম ও খরচ তুলনামূলক কম হয় বলে উচ্চফলনশীল জাতের এ টমেটো চাষে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক। ফেনী জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠ ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর রবি মৌসুমে ফেনী জেলায় টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩০০ হেক্টর। এরই মধ্যে ২৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ হেক্টর জমিতে উদয়ন প্লাস জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৫ টন ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
জেলার বিভিন্ন স্থানে উদয়ন প্লাস, উদয়ন, রোমা, বাহুবলী ও স্থানীয় অন্য জাতের টমেটো চাষ করা হয়। সদর উপজেলার কালিদহ, পাঁচগাছিয়া, মোটবী, ফুলগাজী উপজেলার সদর, দরবারপুর, মুন্সিরহাট, আমজাদহাট, আনন্দপুর, সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি, চর দরবেশ, চরচান্দিয়া, আমিরাবাদ, ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর, রাধানগর, দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর, রাজাপুরসহ প্রায় সবকটি এলাকায় বেড়েছে টমেটোর চাষ।
কৃষি বিভাগ বলছে, টমেটো আবাদ করা কৃষকদের ভালো ফলনের দিক মাথায় রেখে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে স্থানীয় কৃষকেরা জৈব সার ব্যবহার করার কারণে মাটির উর্বরতা বাড়ছে। বিষমুক্ত সবজি চাষ নিশ্চিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছর রবি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে টমেটোর বাম্পার ফলন হবে।
আরও পড়ুন: বিষমুক্ত লাউ চাষে সফল শার্শার শফিকুল
ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের ধলিয়া গ্রামের আবুল খায়ের মিন্টু জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী এ বছর তিনি ১২ শতক জমিতে উদয়ন প্লাস জাতের টমেটো আবাদ করেছেন। উন্নত পদ্ধতি মালচিং পেপার ও ভার্মিং কম্পোস্ট ব্যবহার করে তিনি এ টমেটো চাষ করেন। ৪০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশা করেন। বীজ বপনের প্রথম দিকে প্রাকৃতিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবুও এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হবে বলে মনে করছেন তিনি।
সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা এলাকার কৃষক মো. জমির জানান, গত বছরও তিনি টমেটোর আবাদ করে লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও তিনি ৩০ শতক জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। বৈরী আবহাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলে এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের নুরুল আফছার রবি মৌসুমে অন্য রবিশস্যের পাশাপাশি বাহুবলী জাতের টমেটো আবাদ করেছেন। বাজারে টমেটোর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তিনি। এ বছর তিনি ৩০ শতক জমিতে চাষ করেছেন। এতে শ্রম ও খরচ কম হয়েছে। ভালো ফলন হলে তিনি লাভবান হবেন।
দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক, আব্দুস সাত্তার সুমন ও রফিকুল ইসলাম উদয়ন প্লাস, উন্নয়ন, বাহুবলী ও বিজলী-১১ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। তারা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ করে টমেটো উৎপাদিত হয় ৩৫-৪০ হাজার কেজি।
আরও পড়ুন: দেশের ৫০০ কেজি রূপবান শিম যাচ্ছে ইতালি
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-মারুফ বলেন, ‘মালচিং পদ্ধতিতে ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত জাতের টমেটো চাষে লাভ আরও বেশি হবে।’
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনোজ কান্তি দেবনাথ বলেন, ‘অন্য ফসলের তুলনায় টমেটো চাষ বেশি লাভজনক। সারাবছরই ভালো দাম থাকে। এজন্য কৃষকেরা টমেটো চাষে বেশি আগ্রহী। এছাড়া ফুলগাজীর মাটি ও পরিবেশ টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত। প্রতিটি পরিবার যদি টবে কিংবা বস্তায় টমেটো চাষ করে, তাহলে পরিবারের চাহিদা সহজেই পূরণ করা সম্ভব। টমেটো চাষের ক্ষেত্রে জাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, ‘উন্নত জাত নির্বাচন, রোগবালাই, পোকামাকড় দমনসহ সব বিষয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। এ বছর ফুলগাজী উপজেলার জন্য টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে টমেটো আবাদ করা হয়েছে ২২ হেক্টর।’
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসইউ/জিকেএস