ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

কৃষকের একটি দিবস এবং আমাদের দায়বদ্ধতা!

সমীরণ বিশ্বাস | প্রকাশিত: ০৩:৪৩ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে কৃষির অবদান অনেক। আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেন কৃষকেরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। এক একটি সবজি বা ফসল তাদের কাছে নিজের সন্তানের মতো। তাদের জন্যই আমরা ভালো-মন্দ খেতে পারি। কিন্তু আমাদের অন্নের জোগাড় করতে গিয়ে অনেক সময়ে তাদেরই দু’মুঠো ভাত জোটে না। তবুও নিজের কাজ চালিয়ে যান তারা। সেই কৃষকদের আজ ধন্যবাদ জানানোর একটি দিবস উদযাপন করা দেশের সামগ্রিক দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশগুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। পরিশ্রমী কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রয়াসেই এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন ধান উৎপাদিত হতো। এখন হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হচ্ছে চার টনেরও বেশি। হিসাব করলে তা ছয় টন। এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। দেশের এই সমৃদ্ধির পেছনে কৃষকের পরিশ্রমের অবদান অনস্বীকার্য।

আরও পড়ুন: ৪০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা রুবেলের 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষকদের জন্য একটি দিবস আছে। মূলত দিনটিতে দেশ ও জাতির প্রতি কৃষকের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো দিবস নেই! ২৩ ডিসেম্বর ভারতে ন্যাশনাল ফার্মার্স ডে বা কৃষাণ দিবস পালন করা হয়। দিবসটি পাকিস্তানে ১৮ ডিসেম্বর, আফগানিস্তানে ২২ মার্চ, ঘানায় ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবার, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১১ নভেম্বর, ভিয়েতনামে ১৪ অক্টোবর, জাম্বিয়াতে আগস্ট মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয়। আমেরিকায় ন্যাশনাল ফার্মার্স ডে পালন করা হয় প্রতি বছর ১২ অক্টোবর। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে চীন, আমেরিকা ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ‘জাতীয় কৃষক দিবস’ পালন করা হয়।

বাংলাদেশে যদিও পহেলা অগ্রহায়ণ জাতীয় কৃষি দিবস এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদ দিবস উদযাপন করা হয়। নবান্নের সঙ্গে সংগতি রেখে ২০০৮ সাল থেকে পহেলা অগ্রহায়ণ জাতীয় কৃষি দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এটিও সারাদেশে ব্যাপকভাবে পালিত হতে দেখা যায় না! কৃষকেরা দেশের মেরুদণ্ড। তারা ফসল না ফলালে আজ দেশ এ পর্যায়ে এসে দাঁড়াতো না। অন্য কাজের বদলে আমাদের ফসল ফলাতে হতো।

সামান্য অর্থের বিনিময়ে যারা আমাদের এত বড়, সবচেয়ে মূল্যবান পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাদের অনেক সময়েই অবহেলায় থাকতে হয়। কৃষক বা চাষির ঘরের ছেলে-মেয়েরা আর পাঁচটা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের মতো বড় হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভাবেই সংসার চলে তাদের। এই ফসল ফলানো বা চাষির শ্রমের পেছনে অনেক কষ্ট, অনেক স্ট্রাগল থাকে, যা হয় তো জানাই যায় না। এই নেপথ্যে থাকা নায়কদের কুর্নিশ জানানোর এখনই সময়।

আরও পড়ুন: মাছের খামারে সফল মিরসরাইয়ের অহিদুন নবী 

কৃষিপ্রধান এই দেশে কৃষকদের জন্য একটি দিবস উদযাপন করা দেশের সামগ্রিক দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের মতো ছোট একটি ভূখণ্ড থেকে ১৮০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান দেওয়া চারটিখানি কথা নয়। যারা এই ক্ষুধার অন্ন জোগান, তাদের সম্মানিত করলে জাতি সমৃদ্ধ হবে।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন