পাহাড়ে ধান চাষের ধারণা পাল্টে দেবে সমলয় পদ্ধতি
পাহাড়ে ধান চাষের ধারণা পাল্টে দেবে সমলয় পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ধান চাষে পাহাড়ে কৃষিকাজে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগের অংশ হচ্ছে সমলয় পদ্ধতি। কৃষকেরা মাঠে একসঙ্গে একই জাতের ধান, একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করতে পারবেন। ধান চাষে এ রকমের কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গার সীমান্তঘেঁষা তবলছড়ির সিংহপাড়ায় ট্রেতে বীজতলা তৈরি কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে সুবিধাভোগী কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেজী চক্রবর্তী।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা বেগম, উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সবুজ আলী, কৃষক মো. হায়দার আলী, মো. আমির হোসেন ও মো. জসিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
জানা যায়, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে ঘণ্টায় ১ একর জমিতে ধান রোপণ করা যায়। ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক সারাদিনে এই পরিমাণ চারা রোপণ করতে পারেন। এই যন্ত্র কিনতে অর্ধেক থেকে ৭০ শতাংশ টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার। আশা করা হচ্ছে, ধান চাষ ও কাটার খরচ নেমে আসবে অর্ধেকে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তারা এ বছর সমলয় চাষ পদ্ধতি শিখে আগামীতে এ পদ্ধতিতে চাষ করবেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করবেন।
প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় মাটিরাঙ্গার তবলছড়ির সিংহপাড়ায় ৪ হাজার ৫০০ ট্রেতে বোরো ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। সমলয় পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে আলতাফ বিএল ৭০ হাইব্রিড জাতের বোরো ধান চাষ কবরেন ৭৩ কৃষক। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা পরবর্তী ২৫ দিনের মধ্যে রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হবে। চারা রোপণের ৫ মাসের মাথায় ধান কাটা হবে।
সিংহপাড়া ব্লকের কৃষক মো. হায়দার আলী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো সমলয় পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা করেছি। রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে না। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ট্রেতে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন হচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের চারা রোপণের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে আমাদের।’
কৃষক মো. আমির হোসেন বলেন, ‘এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে শ্রমিকের মজুরি কম লাগবে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমে যাবে। এ বছর ফলন ভালো হলে ভবিষ্যতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ বাড়বে।’
আরও পড়ুন: লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০০ হেক্টর বেশি চাষের সম্ভাবনা
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘ট্রে পদ্ধতিতে চারা টেনে তুলতে হয় না। তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে যায় না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন।’
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সবুজ আলী বলেন, ‘৫০ একর জমিতে বোরো ধান চাষের জন্য ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, সার, বীজ, কীটনাশকসহ ফসল কাটা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব খরচ বহন করবে সরকার। একজন কৃষক শুধু জমি দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এ পদ্ধতি অবলম্বনে কৃষকেরা লাভবান হবেন।’
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/জিকেএস