নীলফামারীতে কলার সাথী ফসলে আগ্রহী চাষিরা
নীলফামারীর সদরের পলাশবাড়ী এলাকার নলনী কান্ত রায়। একসময় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো, তাতে কোনোমতে সংসার চলতো তার। তবে টানাপোড়েনের সংসারে কলা চাষ করে বদলে গেছে নলনীর জীবন। এখন আর আগের মতো সংসারে অভাব নেই বললেই চলে। শুধু নলনীই নয়, তার মতো কলা চাষে অনেক কৃষকের বদলে গেছে ভাগ্য।
জানা গেছে, নীলফামারীর ৬ উপজেলায় কলা চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন তারা। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষি। কৃষকেরা জমিতে বেশি লাভের আশায় কলার জমিতে চাষ করছেন সাথী ফসল। দেশের অন্য অঞ্চলের মতো নীলফামার বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে মিশ্র পদ্ধতিতে সাথী ফসল।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ১৭২ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলায় ৫৫ হেক্টর, ডোমার ২৮ হেক্টর, ডিমলা ২ হেক্টর, কিশোরগঞ্জ ১৩ হেক্টর, জলঢাকা ৪২ হেক্টর ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৩২ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৯৩ দিনে বিঘাপ্রতি উৎপাদন ১০০ কেজি
চাষিরা বলছেন, এক মৌসুমে একই সময়ে জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। জেলার অনেক কৃষক কলার জমিতে আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, মাসকালাই প্রভৃতি চাষ করছেন।
চাষি নলনী কান্ত রায় বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে কলা গাছ লাগিয়েছি। কলা ক্ষেতের মধ্যে আলু লাগিয়েছি। আলু উঠলে মসুরি ডাল লাগাবো। প্রাকৃতিক কোনো কারণে ক্ষেত নষ্ট না হলে প্রতি বিঘায় লক্ষাধিক টাকার কলা বিক্রি করা যাবে। এরই মধ্যে আলু বিক্রি করার উপযোগী হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর ধরে এই কলা চাষ করে আমার সংসারের অভাব দূর হয়েছে।’
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘কলা চাষে লাভের পাল্লাই ভারি থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৪০০ কলা গাছ লাগানো যায়। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ১১ মাসের মধ্যে কলা কাটা যায়। এর মধ্যে কলা পাওয়া যায় ৩০০-৩২০টি গাছে। নানা কারণে বাকি গাছ জমিতে টিকে থাকে না। বর্তমানে এক পির কলা উৎপাদন করতে ৮০-১০০ টাকা খরচ হয়।’
লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বেলতলী এলাকার চাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে সবজির দাম কিছুটা কম হলেও আলু বিক্রি শেষে ওই ক্ষেতেই মিষ্টিকুমড়া অথবা শাক জাতীয় ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় ১০-১২ হাজার টাকা পাওয়া যেতে পারে। চুক্তিভিত্তিক নেওয়া জমিতে কম সময়ে, কম জমিতে এক মৌসুমে বেশি ফলন পেতে একাধিক ফসল চাষ করছি।’
আরও পড়ুন: কমলা চাষে দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন ফারুক
নিমতলী এলাকার মকিলা বেওয়া বলেন, ‘আমার স্বামী সারাবছর বাহিরে (ইট-ভাটায়) কাম করে। দশ বছর থেকে কলা আবাদ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। কলা আমাদের একমাত্র আবাদ। কলা চাষে লাভ ভালো আছে।’
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় দিন দিন কলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সাথী ফসল চাষ জমিতে বেশি আয় করার একটি কৌশল। লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা কলার জমিতে সাথী ফসল চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।’
এসইউ/জিকেএস