আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন শরীয়তপুরের চাষিরা
শরীয়তপুরে কয়েক দশক আগেও হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে আখ চাষ হতো। এখানকার আখ জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যেত রাজধানীসহ আশেপাশের জেলায়। দিন দিন আখ চাষ ব্যয়বহুল হওয়া এবং সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আখ চাষ ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা ও মেঘনা নদী বেষ্টিত হওয়ায় শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আখ উৎপাদন হতো। এর মধ্যে ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা, গুয়াখোলা, মুন্সিরটেক, টেকপাড়, উত্তর ডামুড্যা, রাম রায় কান্দি, গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর, কুচাইপট্টি, নলমুড়ি, নাগেরপাড়া, আলালপুর, জাজিরা উপজেলার মাঝিরহাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা আখ চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। এসব অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার আখ চাষি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে মাত্র ৪ শতাধিক কৃষক আখ চাষের সঙ্গে জড়িত।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫০ হেক্টর জমিতে। তবে ৩২০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। গত বছর আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪২০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছিল ৩৮০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ফলন হয়েছিল ২৩ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন। সে হিসেবে গত ১ বছরে আখের আবাদ কমেছে ৬০ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: ২৫ টাকায় লেবুর চারা কিনে বছরে আয় লাখ টাকা
পূর্ব ডামুড্যা এলাকার আখ চাষি শাহীন প্রধান (৫৫) অন্তত ৩০ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছেন। একসময় তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করতেন। তখন আখের চাহিদাও ছিল প্রচুর। তার উৎপাদিত আখ জমি থেকেই শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, বুড়িরহাট, ভেদরগঞ্জ, বরিশালের মুলাদি ও ঢাকার সদরঘাট অঞ্চলের পাইকাররা কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন আর পাইকাররা জমি থেকে আখ কিনতে আসেন না। এ আখ বিক্রি করতে হয় ডামুড্যার পাইকারি বাজারে। দিন দিন আখ চাষ ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়ায় এ বছর তিনি মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন।
আখ চাষে আগ্রহ কমার বিষয়ে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার। তিনি বলেন, ‘একসময় উৎপাদন ব্যয় কম ছিল, তাই বেশি জমিতে উৎপাদন করা হতো। দিন দিন উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সেভাবে লোকজন কিনে নিচ্ছে না। একসময় হাটে ১ দিনে ৪ হাজার পিস থেকে ৫ হাজার পিস আখ বিক্রি করতাম। এখন ৪০০ পিস বিক্রি করতেই ঘাম ছুটে যায়। এছাড়া আখ চাষে সরকার থেকে কোনো সাহায্য পাই না। আখ চাষিদের জন্য যদি কীটনাশক, সার বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হতো; তাহলে আগের মতো সুদিন ফিরে আসতো।’
গোসাইরহাট এলাকার আখ চাষি বাবুল মাহমুদ মাল (৬০) বলেন, ‘আমার নিজের জমি না থাকায় ১০ বছর ধরে অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করি। যা আখ হয় তার ৩ ভাগের ১ ভাগ আমি পাই। আখ চাষে খরচ বাড়ার কারণে বেশি দামে আখ বেচতে হয়। তাই লোকজন আগের মতো এখন আর কেনে না। আখ চাষিরা অনেক কষ্টে আছি।’
আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল শিবগঞ্জের মোশাররফ
ডামুড্যা হাটের পাইকারি আখ ব্যবসায়ী জসিম হাওলাদার (৫০) বলেন, ‘১৫ বছর আগে ডামুড্যা বাজারে আমার মতো ৫০ জন পাইকারি ব্যবসায়ী ছিল। এখন মাত্র ১০ জন আখ ব্যবসায়ী টিকে আছে। আগে ১ দিনে ২ লাখ টাকার আখ বিক্রি হতো। এখন ৫০ হাজার টাকাও বিক্রি হয় না। গত বছর আমি প্রতিদিন ৫০০ পিস মাল বিক্রি করেছি। এ বছর ২৫০ পিস মাল বিক্রি করতেই কষ্ট। সারাদিন আখ বিক্রি করে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হয়।’
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আখ ফসলটি মূলত শিল্প মন্ত্রণালয় তদারকি করে। এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত নয়। যেসব অঞ্চলে চিনি কল রয়েছে; সেসব অঞ্চলের আওতাভুক্ত আখ চাষিদের সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়। এ অঞ্চল চিনি কলের আওতাভুক্ত না হওয়ায় চাষিদের জন্য সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। তবে তারা আমাদেরই কৃষক, আখ চাষের বিষয়ে কোনো পরামর্শ চাইলে পরামর্শ দেওয়া হবে।’
বিধান মজুমদার অনি/এসইউ/জিকেএস