মিরসরাইয়ে বরবটি চাষে লাভবান কৃষক
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গ্রীষ্মকালীন বরবটি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। আশানুরূপ ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছেন তারা। এতে বরবটি চাষে আগ্রহ বড়ছে চাষিদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে এবার গ্রীষ্মকালীন প্রায় ২০০ একর জমিতে বরবটি চাষ করা হয়। এর মধ্যে দেশি এবং হাইব্রিড প্রজাতির আবাদ করা হয়। এবার দেশি বরবটি চাষ করা হয়েছে বেশি। তবে সমতল জমি ছাড়াও অনেকে পাহাড়ে বরবটি চাষ করেছেন।
বর্তমানে কৃষকেরা পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি করছেন ৫০-৬০ টাকা। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ৮০-৯০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, খৈয়াছড়া, ওয়াহেদপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়নে বরবটি চাষ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে।
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে লাউ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মহামায়া প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে, পাহাড়ে চাষ করা বরবটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। সেখানে বসে আঁটি বাঁধা হচ্ছে। সেখান থেকে মিঠাছড়াসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হবে।
রায়পুর এলাকার কৃষক আবু জাফর বলেন, ‘আমাদের গ্রামে আমিসহ কয়েকজন পাহাড়ে বরবটি চাষ করেছি। বাগানের ফাঁকে ফাঁকে বরবটির চারা রোপণ করা হয়েছে। মহামায়া লেক থেকে সময়মতো পানি দেওয়ার কারণে ফলনও ভালো হচ্ছে।’
চাষি আহসান উল্লাহ বলেন, ‘সমতল জমি থেকে পাহাড়ে ফলন কম হয় না। বরং কিছু কিছু জায়গায় মাটির উর্বরতার কারণে ফলন আরও বেশি হয়। তবে দূরে হওয়ায় বরবটি তুলে নিয়ে আসতে কষ্ট হয়।’
উপজেলার নিজতালুক এলাকার কৃষক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এবার আমি ২৫ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন বরবটি চাষ করেছি। গত সপ্তাহে ৮০ কেজি বরবটি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেছি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা করে। এবার এ পর্যন্ত ৫ বার বাজারে বিক্রি করেছি। আরও এক মাস বিক্রি করতে পারবো।’
আরও পড়ুন: পাহাড়ে পরীক্ষামূলক রাম্বুটান চাষে সফল নাজমুল
মধ্যম সাহেরখালীর কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বরবটি চাষে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এবার ফলন ভালো হয়েছে। দামও আগের তুলনায় ভালো। এবার ২০ শতক জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। এরই মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আরও ১ মাস বিক্রি করতে পারবো।’
খৈয়াছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন সবজি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তাই কৃষকেরা বিপুল পরিমাণ সবজি চাষ করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত সব ধরনের সবজি চাষ করা হয়। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি উপজেলায় একটি হিমাগারের ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে কৃষকেরা সবজি সংরক্ষণ করে আরও ভালো মূল্য পেতেন।’
মিরসরাই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী মো. নুরুল আলম বলেন, ‘মিরসরাইয়ে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গ্রীষ্মকালীন বরবটি চাষ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আমরা কৃষকদের সবজি চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কীভাবে ভালো ফলন হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছি।’
এসইউ/এএসএম