ভোলায় সমলয় পদ্ধতি
রোপা আমন চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা
ভোলায় প্রথমবারের মতো সমলয় পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ। নতুন এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে শুরু করে রোপণ পর্যন্ত খুব কম খরচ হওয়ায় ব্যাপক লাভের স্বপ্ন দেখছেন ভোলার কৃষকেরা। কৃষকদের দাবি, এ বছর নতুন পদ্ধতিতে আশানুরূপ ফসল ও বেশি লাভ হলে আগামীতে আমন চাষের বিপ্লব ঘটবে জেলায়। তবে এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের সহযোগিতার আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে জানা গেছে, ভোলার দৌলতখান উপজেলার চর খলিফা ইউনিয়নের কলাকোপা গ্রামে শুরু হয়েছে সমলয় পদ্ধতিতে রোপা আমন চাষাবাদ। উপজেলায় এটাই প্রথমবারের মতো নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। জমিতে প্ল্যাস্টিক ট্রেতে মাটি, জৈব সার মিশিয়ে বপন করা হয় আমনের বীজ। মাত্র ১৫-১৭ দিনের মধ্যে ধানের চারা রোপণের উপযুক্ত হয়। এরপর জমি থেকে প্ল্যাস্টিকের ট্রেসহ চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে দেওয়া হয়। শ্রমিক ছাড়াই কম সময়ের মধ্যে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে জমিতে রোপণ করা হয়।
আরও পড়ুন: কালো ধানে বেশি ফলনের আশা কৃষক আলামিনের
কলাকোপা গ্রামের কৃষক মো. শাজাহান ও মো. আলাউদ্দিন জানান, তারা আগে সনাতন পদ্ধতিতে রোপা আমনের চাষ করতেন। এবারই প্রথমবারের মতো সমলয় পদ্ধতিতে রোপা আমন চাষ শুরু করেছেন। সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত একর প্রতি খরচ হতো প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। এখন নতুন পদ্ধতিতে খরচ হবে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা।
কৃষক মো. দেলোয়ার হোসেন ও আবু তাহের কুট্টি বলেন, ‘আমরা আগে সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করলে রোপণের উপযুক্ত হতে ২৫-৩০ দিন লাগতো। এখন সমলয় পদ্ধতিতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। আগের পদ্ধতিতে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হতো। তখন শ্রমিকের ব্যাপক সংকট ছিল। সময়মতো শ্রমিক না পাওয়ায় রোপণও সময়মতো করতে পারতাম না। এখন এ পদ্ধতিতে শ্রমিক ছাড়াই রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ধানের চারা রোপণ হয়ে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে সফল কলেজছাত্র নাহিদ
কৃষক মো. নুরুল ইসলাম, মো. সিরাজুল ইসলাম ও মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আগে আমন চাষ করতে গিয়ে ব্যাপক খরচ হতো। ধানের বাজার বেশি হলে মোটামুটি লাভ পেতাম। এবার মেশিনে চাষ করার কারণে খরচও কম। তাই ধানের বাজার কম হলেও ভালো লাভবান হবো। আমরা এবার ২-৩ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে আমন চাষ করেছি। ফলন ও লাভ ভালো হলে আগামী বছর ৫-১০ একর জমিতে চাষ করবো।’
দৌলতখান উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হুমায়রা সিদ্দিকা জানান, দৌলতখান উপজেলায় এবার প্রথম সমলয় পদ্ধতিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে ৫০ একর। এরমধ্যে পুরোটাই কলাকোপা গ্রামে ৭৩ জন কৃষক করেছেন। নতুন এ পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করতে পারলে কৃষি খাতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ রাখবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সমলয় হবে অন্যতম মাধ্যম।’
জুয়েল সাহা বিকাশ/এসইউ/এমএস