ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

লবণাক্ত মাটিতে কেনাফ চাষে সফলতার আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক | খুলনা | প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, ২২ জুন ২০২৩

‘কেনাফ’ পাটের মতো পরিবেশবান্ধব আঁশ জাতীয় ফসল। মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে পাটের মতোই কার্যকর ভূমিকা পালন করে এ ফসল। খুলনার কয়রা উপজেলার লবণাক্ত জমিতে পাটের বিকল্প হিসেবে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে এ ফসলের। পাটের বিকল্প হিসেবে কেনাফ চাষে সফলতা পেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কয়রা উপজেলার হাতিয়ারডাঙ্গায় ৪ কৃষকের মাধ্যমে ৪ বিঘা জমিতে চলছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন। ১৫-২০ দিন আগে বপন করা বীজ থেকে এরই মধ্যে চারাও গজিয়েছে। কেনাফ চাষের বিষয়টি কাছ থেকে দেখার জন্য বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আবদুল আউয়াল ও পরিচালক (কৃষি) নার্গীস আক্তার গত ১৬ জুন কয়রা সফর করেন। এ সময় তারা কেনাফ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন কৃষকদের।

jagonews24

আরও পড়ুন: শার্শায় মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল মমিনুর 

প্রথমবারের মতো কয়রার আমাদী ইউনিয়নের হাতিয়ারডাঙ্গা এলাকায় অপ্রচলিত এ ফসলের আবাদ করেছেন কৃষক প্রবীর সরকার (৩৫)। এরই মধ্যে তার জমিতে ১০-১২ ইঞ্চি, আবার কোথাও কোথাও ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়েছে কেনাফের চারা। কেনাফ আঁশ জাতীয় ফসল হলেও দেখতে একেবারেই পাট গাছের মতো নয়। কেনাফের পাতাগুলো ঢ্যাঁড়শের পাতার মতো বলে জানান এ কৃষক।

তিনি বলেন, ‘এবারই প্রথম আমার ১ বিঘা জমিতে কেনাফ চাষ করেছি। জায়গাটি লবণাক্ত। নানা সমস্যার কারণে আমন ধান ও তরমুজের বাইরে কখনো অন্য কোনো ফসল চাষ করিনি। এবার কয়রা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে কেনাফ চাষ করেছি। তারা আমাকে বিনা মূল্যে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রথমদিকে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে বাড়ছে কাউন চাষ 

কেনাফ চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের উপকূলের কৃষিকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচলিত কৃষি থেকে কৃষকদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাটের বিকল্প হিসেবে কেনাফ চাষে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা গেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। অনাবাদি, অনুর্বর জমিতে অল্প পরিচর্যা ও স্বল্প খরচে ১১০ দিন থেকে ১২০ দিনে কর্তন করে কেনাফের ভালো ফলন পাওয়া যায়।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘কেনাফের খড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার, বীজ থেকে ৭-১৩ শতাংশ ওষুধি গুণসম্পন্ন তেল পাওয়া যায়। কয়রায় পাট চাষ করলে প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেনাফ বন্যার পানিতেও বেঁচে থাকে। এটি সহজে পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয় না। এ অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে অন্য ফসলের আবাদ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কেনাফের আবাদ বিস্তার করা যেতে পারে। এটি যথেষ্ট লবণাক্ততা সহনশীল ফসল। পরীক্ষামূলকভাবে এবার কেনাফ চাষে আমরা সফল হয়েছি।’

আরও পড়ুন: শাপলা ও পদ্মফুল চাষে মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা 

কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘কেনাফ একটি লবণসহিষ্ণু ফসল। শুধু তা-ই নয়, এটি জলাবদ্ধ জমিতেও বেড়ে উঠতে পারে। তাছাড়া পাটের চেয়ে বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ ক্ষমতাও এর অনেক বেশি। এ ছাড়া পাটের চেয়ে উৎপাদনও অনেক বেশি।’

এ কৃষিবিদ বলেন, ‘কেনাফ চাষে প্রতি বিঘা থেকে ১২ মণের বেশি আঁশ সংগ্রহ করা যায়। যা টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি চাষ করা সম্ভব হলে লবণাক্ত এলাকার কৃষকদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।’

আলমগীর হান্নান/এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন