থাই পেয়ারা চাষে সফল নাটোরের দুই ভাই
থাই পেয়ারা চাষ করে সফল হয়েছেন নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ মহল্লার দুই ভাই রাজু ও সাজু। তাদের পরিবারে ফিরেছে সুদিন। পাশাপাশি পেয়ারা বাগানে কাজ করে ভালো আছে আরও ২০ পরিবার। জেলার অন্য কৃষক এ ধরনের পেয়ারা বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদলাবেন এমনটি প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।
নাটোরের সদর উপজেলার ফতেঙ্গাপাড়ায় ১০ বিঘা কৃষি জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন থাই পেয়ারা চাষ। পেয়ারার পাশাপাশি আছে দেশি কলা ও চাইনিজ লেবু। চাষ শুরুর পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাগান থেকে ফলন পেতে শুরু করেন তিনি। তাদের জমিতে ২ হাজার ফলনশীল থাই পেয়ারা গাছ আছে। পেয়ারা বাগানে এসব ছোট ছোট গাছে থাই জাতের পেয়ারায় ভরে গেছে। পেয়ারাকে পোকা-মাকড় ও ধুলাবালি থেকে রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাগিং পদ্ধতি।
বছরের মাঝামাঝি সময়ে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা ধরে গাছে। সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়। চারা লাগানোর দশ মাস পর থেকেই ফল পেতে শুরু করেন তারা। বাজারে পেয়ারার দাম কম হলেও বেশি ফলনে তা পুষিয়ে যায়। থাই পেয়ারা মিষ্টি, সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। ফলে সহজেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করা যায়। এছাড়া তাদের বাগানে উৎপাদিত পেয়ারা যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের অনাচে-কানাচে।
আরও পড়ুন: ইছাখালীর চরে তরমুজ চাষিদের হাহাকার
দামও মোটামুটি ভালো। প্রতি কেজি পেয়ারা ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দামে বাগান থেকেই তারা বিক্রি করেন। পাইকাররা বাগানে এসে পেয়ারা নিয়ে যান। তার এ পেয়ারা চাষের সাফল্যে এরই মধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাদের দেখাদেখি স্থানীয় অনেক বেকার তরুণ পেয়ারা চাষ শুরু করেছেন। দুই বছরে তারা সাড়ে ৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেক যুবক পেয়ারা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
বাগানের মালিক রাজু ও সাজু বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। প্রথম দিকে ফলন একটু কম হলেও এখন প্রতিদিনই ফল বিক্রি করি। এ বাগানে নিয়মিত ২০ জন লোক কাজ করে। অনেকে আমাদের কাছে পরামর্শ নিতে আসে। আমরা তাদের পেয়ারা চাষ করতে বলি। এটি ফলনশীল জাতের পেয়ারা। এতে অনেক বেশি ফলন। লাভও ভালো হয়।’
আকলিমা বেগম, কোহিনুর বেগম, আব্বাস আলীসহ বেশ কয়েকজন দিনমজুর বলেন, ‘এ পেয়ারা বাগানে কাজ করে প্রতিদিন যা আয় করি; তাতে আমরা পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে ভালো আছি।’
আরও পড়ুন: ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের
ফতেঙ্গাপাড়া এসে রাজু ও সাজুর বাগান থেকে পেয়ারা কিনে নিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন বলে জানালেন বাবর আলী নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ী। এছাড়া সিলেটের নজরুল ব্যাপারী, চট্টগ্রামের আজিজ, রাকিব এবং ময়মনসিংহ সদরের শ্যামল কুমার, অজিত নন্দী এ বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে বিক্রি করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান জানান, রাজু ও সাজু ফলজ কৃষির উজ্জল দৃষ্টান্ত। আমাদের কৃষি বিভাগ তাদের প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তার এ ফল বাগানে বেশ কিছু শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বেশ কিছু বেকার যুবক কৃষিকাজে উৎসাহিত হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘থাই জাতের পেয়ারা গাছে সারাবছরই ফল হয়। কৃষকেরা যদি এ পেয়ারা চাষে উদ্বুদ্ধ হন, তাহলে আমাদের দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে এবং কৃষক উপকৃত হবেন।’
রেজাউল করিম রেজা/এসইউ/জেআইএম