ফরিদপুরে সরিষার হলুদ ফুলে কৃষকের মুখে হাসি
ফরিদপুরের চরাঞ্চলের সরিষার ক্ষেতগুলো হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ মৌসুমে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। আমন ধান চাষের পর কৃষকরা ওই জমিতে সরিষা চাষ করেন। এরই মধ্যে সরিষার আবাদ শেষ হয়েছে। বিশেষ করে চরের কৃষকরা অগ্রীম সরিষা আবাদ করেন। যে কারণে অন্য এলাকার চেয়ে এখানে পুরোদমে সরিষা গাছে ফুল ফুটেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, সদর উপজেলার চরাঞ্চল নর্থ চ্যানেল ও মুনসুরাবাদে ধান ও বিভিন্ন ডালের চেয়ে সরিষা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষার প্রতি উৎসাহী হয়েছেন কৃষকরা। গতবারের ভালো ফলনে এবার বেড়েছে সরিষার চাষ। এবারও সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনা জানান দিচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। ফলে চাষিদের মুখে হাসি লক্ষ্য করা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায়ই সরিষা উৎপন্ন হয়। সবচেয়ে বেশি সরিষা উৎপন্ন হয় বোয়ালমারী উপজেলায়। গত মৌসুমে ফরিদপুরে ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। জেলার চাষিরা বারি-১৪, বিনা-১৬, বিনা-৪, বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষ করেন। বীজ বপন থেকে শুরু করে এ ফসলে সময় লাগে ৮০-৯০ দিন। চলতি অর্থবছরে পুরো জেলায় ১২ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের মিলন পালের ডাঙ্গির কৃষক ফাখের মিয়া, শহিদুল ইসলাম, আলেফ কারী, ছুরমান বেপারী জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে সরিষা উৎপন্ন হয় কমপক্ষে ৮-৯ মণ। হালচাষের পর বীজ বপন, নিড়ানি, সার ও সেচ দিতে হয়। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় গড়ে ৬-৭ হাজার টাকা। কম হলেও প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমিতে ৭-৮ হাজার টাকার বেশি লাভ করা সম্ভব। কিন্তু সমপরিমাণ জমিতে ধান হয় গড়ে ১৫-২০ মণ। ধান চাষে খরচ বেশি। সে হিসেবে সরিষা চাষে লাভ বেশি। তাই এলাকার কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও চর এলাকাজুড়ে আগাম সরিষা আবাদ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতগুলো হলুদ রঙের ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হচ্ছে।’
কৃষক সেকেন মাতুব্বর জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। জমির পরিমাণ প্রায় ৪ বিঘা। সরিষা চাষে ঝুঁকি ও খাটুনি কম। তবে লাভ বেশি। এ জন্য তিনি সরিষা চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি সরিষা চাষ থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় এলাকায় মুসুরি, মুগসহ বিভিন্ন জাতের ডাল চাষ হলেও এখন তেমন হয় না। সরিষা চাষে লাভবান হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ইউনিয়নে প্রায় ৩০০-৪০০ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এর সঙ্গে প্রায় ২ সহস্রাধিক কৃষক যুক্ত আছেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলাকার চাষিদের কাছে সরিষার কদর বাড়ছে। গত অর্থবছরের তুলনায় ৩,৪৫৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও বাম্পার ফলন হবে।’
এন কে বি নয়ন/এসইউ/জিকেএস