বেশি ডিম দেওয়া মুরগি চেনার উপায়
পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই আমাদের দেশে ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে ডিম উৎপাদনের জন্য বর্তমানে পোলট্রি শিল্প বেশ লাভজনক কাজ।
মুরগির খামার থেকে বেশি পরিমাণে ডিম উৎপানের জন্য যে মুরগিতে বেশি ডিম দেয় সেই জাতের মুরগি বাছাই করতে হবে। ভালো জাতের মুরগি বাছাই করতে না পারলে খামার করে বেশি লাভ করা সম্ভব নয়। তাই বেশি ডিম দেওয়া মুরগি চেনা, এর আচরণ ও অন্য লক্ষণগুলো সর্ম্পকে জানা খুবই জরুরি।
মুরগির দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং এর আচরণের ওপর শরীরের অবস্থা অনুমান করা যায়। সে কারণে বেশি ডিম দেওয়া মুরগি কীভাবে চেনা যায় তা জানা যাক।
বেশি ডিম দেওয়া মুরগির মাথা হবে ছোট, হালকা এবং মাংশল অংশ থাকবে কম। মাথার ঝুঁটি ও গলার ফুল হবে উজ্জ্বল লাল রঙ কিংবা গোলাপি বর্ণের । তবে এগুলো অবশ্য নরম, সুগঠিত ও প্রস্ফুটিত হবে।
পাখির চোখের বর্ণ হবে উজ্জ্বল। চোখ সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। নাক ও মুখ থাকবে শ্লেষ্মাহীন পরিষ্কার। নাক দিয়ে সর্দিঝরা কিংবা গলার ভেতর ঘড়ঘড় শব্দ হবে না ।
মুরগির দেহ সুগঠিত হবে। পরিমাণ মতো খাদ্য ও পানি পান করবে, যে কারণে খাদ্যথলিতে খাবারে ভর্তি থাকবে। পেটে ডিম অনুভব হলে অবশ্যই ওজনে ভারি হবে। এ ধরনের মুরগির পিঠ হয় লম্বা ও প্রশস্ত। শরীরের কোনো অংশে খুঁত, অপূর্ণতা অথবা বিকলাঙ্গ হবে না।
সুস্থ অবস্থায় মুরগির পালক উজ্জ্বল ও সুবিন্যস্ত থাাকে। এ ধরনের মুরগি সাধারণত মার্চ মাসের দিকে পালক পাল্টায়। তবে মাথার উপরিভাগের পালক শূন্য হয়ে টাকের সৃষ্টি হয়।
মুরগির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম উৎপাদনের হার তুলনামূলকভাবে কমে যায়। সাধরণত ৫৬০ দিন বয়স পর্যন্ত মুরগি মোট উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ডিম দেয়। তাই বয়ষ্ক মুরগি খাবারের জন্য বিক্রি করে খামারের নতুন মুরগি তোলা উচিত।
স্বাস্থ্যবান মুরগি সবসময় চঞ্চল থাকে এবং খাবার খুঁজতে ব্যস্ত থাকে বলে মনে হয়। হঠাৎ কোনো শব্দ হলে অথবা শত্রুর উপস্থিত বুঝতে পারলে মুখে এক ধরনের শব্দ করে স্বজাতিকে সতর্ক করে দেয়। কেউ ধরতে গেলে দৌড়ে পালায়।
সুস্থ মুরগির পা থাকবে সুন্দর ও সুগঠিত। মুরগির পায়ের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাহাঁটি করবে।
ডিম পাড়া মুরগির মলদ্বার হবে প্রশস্ত ও ডিম্বাকৃতি। পরীক্ষা করলে সেখানে আর্দ্র ও রক্তাভ দেখাবে। মলদ্বারের উভয় পাশে হাত দিলে পাছার হাড় অনুভব করা যায়। উৎপাদনশীল মুরগির দুই হাড়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে দুই ইঞ্চি।
মুরগির তলপেটে হাত দিয়ে বোঝা যাবে এর ডিম ধারণের ক্ষমতা। ডিম দেওয়া অবস্থায় তলপেট প্রশস্ত ও নরম থাকে। মুরগি ডিম পাড়া অবস্থায় বুকের হাড়ের নিম্নভাগ এবং পাছার উভয় হাড়ের মাথা পর্যন্ত দূরত্ব হবে দুই ইঞ্চি। মুরগির তলপেটে মেদ থাকবে না এবং চাপ দিলে পেটের ভেতর ডিম অনুভব হবে।
উৎপাদনীল মুরগির চামড়ার নিচে কোনো মেদ জমা থাকবে না। চামড়া হবে পাতলা ও নরম । সুস্থ অবস্থায় মুরগির দাঁড়ানোর ভঙ্গি স্বাভাবিক থাকে। পাখি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে। ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মলদ্বার, ঠোঁট, ঝুঁটি, গলার ফুল ও পায়ের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে। রঙ পরিবর্তন শেষ হলে বুঝতে হবে ডিম পাড়ার সময় শেষ।
বেশি ডিম দেওয়া মুরগির আচরণ হবে সতর্কভাব, ভদ্র ও চঞ্চল। ডিম পাড়ার সময় বাসায় ঢুকবে, কোনো সময় অলস বসে থাকবে না । ডিম পাড়া মুরগির পিঠে হাত রাখলে সহজেই বসে পড়বে।
সুস্থ এবং উৎপাদনশীল মুরগি চিহ্নিত করে তবেই পালন করা উচিত। এতে একদিকে যেমন রোগবালাইয়ের সম্ভাবনা কম থাকবে, তেমনি খামারি লাভবান হবেন ।
এমএমএফ/জিকেএস