শিমের কেজি ২০০ টাকা
নওগাঁয় আগাম জাতের শিমের ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। পাইকারিতে ১৫০-১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে শিম গাছে পোকা ও পচানি রোগ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিমের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৭১ হেক্টর, রানীনগরে ১০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ১০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৩ হেক্টর, ধামইরহাটে ৮ হেক্টর, সাপাহারে ৮ হেক্টর, মান্দায় ৫ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ২০ হেক্টর। এছাড়া শীতকালীন ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম রোপণের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিমের মাচার ওপরে সবুজ পাতার ফাঁকে লক লকে ডগায় রঙিন ফুলে ছেয়ে আছে। কোথাও ফুল থেকে কুঁড়ি হয়েছে আবার কুঁড়ি থেকে শিম। এমন দৃশ্য নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে। গত ১৫দিন থেকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের শিম। স্থানীয় এ আগাম জাতের শিমের ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। চার মাসের এ আবাদে প্রতি বিঘায় খরচ পড়ে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। আর মৌসুমজুড়ে বিক্রি হয় প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকা।
চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় শিম চাষে বিপাকে পড়তে হয়েছিল। গেল কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাটিতে রস পেয়ে এবং হালকা শীতের আমেজ ও কুয়াচ্ছন্ন হওয়ায় শিমের আবাদ ভালো হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ার আশায় পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে গাছে পোকা ও পচানি রোগ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। সপ্তাহে দুবার কীটশানক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে কীটনাশক ব্যয়ে।
শুরুতে বিঘাপ্রতি ৩-৫ থেকে কেজি শিম সংগ্রহ করা গেলেও কয়েকদিন পর থেকে কয়েক মণ সংগ্রহ করা শুরু হবে। শিমের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে দামও চড়া। পাইকারিতে ১৫০-১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নে কসবা গ্রামের শিম চাষি খলিলুর রহমান বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করেছি। গত ১০ দিন ৪ কেজি শিম তুলে বাজারে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন শিমের উৎপাদন কম হওয়ায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গাছে পচানি রোগে কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। সপ্তাহে ১ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। তবে যখন শিম বেশি উৎপাদন হবে তখন ২০০-৩০০ টাকার কীটনাশক স্প্রে করলেই হবে।
গোবিন্দপুর গ্রামে আরেক চাষি আজাহার বলেন, দুই বিঘা জমিতে শিম লাগিয়েছি। আষাঢ় মাসে ১৫ তারিখের দিকে জমিতে শিমের বীজ রোপণ করা হয়। ভাদ্র মাসে গাছে ফুল আসা শুরু হয়। কার্তিক মাস থেকে শিম বিক্রি শুরু হবে চলবে চৈত্র মাস পর্যন্ত। শিমের আবাদে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক মৌসুমে বিঘা প্রতি প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকার বিক্রি হয়ে থাকে। শুরুতে দাম ভালো পাওয়া গেলেও উৎপাদন যখন বেশি হয় তখন ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
ধোপাইপুর গ্রামের শিম চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে শিমের বীজ লাগানো হয়েছিল। নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয়বার আবার রোপণ করা হয়। এবছর খরার কারণে শুরুতে গাছ ভালো হয়নি। কিছুদিন আগে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় মাটিতে রস হয়েছে। এছাড়া হালকা শীতের আমেজ ও কুয়াচ্ছন্ন হওয়ায় শিমের আবাদ ভালো হচ্ছে। গাছে ফুল এসেছে কিন্তু এখনো ফল ধরা শুরু না করায় বিক্রি করতে পারছি না। বলা যায় খরার কারণে দেরি হয়ে গেছে।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের গৃহবধু মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ১৩ কাঠা জমিতে শিমের আবাদ করা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ২ কেজি শিম তোলা হয়। বাজারে পাইকারি বিক্রি করা ১৭০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে ওই জমি থেকে ৫ কেজি তুলে একই দামে বিক্রি করা হয়। এখন ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে বেশি পরিমাণ শিম উঠবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, আগাম সবজি চাষে খরচ ও পরিশ্রম বেশি হলেও ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। তবে পোকামাড়ক ও রোগবালাই দমনে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। অসময়ে বা আগাম সবজির ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আরও উৎসাহিত হবেন।
আব্বাস আলী/এমএমএফ/জেআইএম