জাগ দেওয়া পাট থেকে চকচকে আঁশ পাওয়ার উপায়
পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয়। একসময় পাট রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হতো। তবে সেই সুদিন এখন আর নেই। তারপরেও আমাদের দেশের কৃষকরা এখনও পাট চাষ করছেন। তবে পাট থেকে উন্নতমানের আঁশ সংগ্রহ করতে না পারায় চাষিরা পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন না। এবার জেনে নিন যেভাবে জাগ দিলে উন্নতমানের আঁশ পাবেন।
উন্নতমানের উজ্বল পাটের আঁশ পেতে হলে কিছু কৌশল ও নিয়ম মানতে হবে। জাগ দেওয়া পাট থেকে চকচকে আঁশ পাওয়ার কৌশল জানলে প্রতিমণে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকারও বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভালোমানের আঁশ উৎপাদনের জন্য পাট গাছে ফুলের কুড়ি আসা মাত্রই পাট কাটতে হবে। কাটার পর চিকন ও মোটা পাট গাছ আলাদা করে আঁটি বেঁধে পাতা ঝড়িয়ে গাছের গোড়া ৩ থেকে ৪ দিন এক ফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরে পরিষ্কার পানিতে জাগ দিতে হবে।
জাগ দেওয়ার জন্য খুব গভীর পানির দরকার নেই। মাঠে ঘাসের উপর এক ফুট থেকে দেড় ফুট পানি থাকলে সেখানেও জাগ দেওয়া যায়। তবে পাট গাছের সংখ্যা বা পরিমাণ অধিক হলে আরও গভীর পানির দরকার হয় যাতে জাগ ডুবতে পারে।
মাঠে ঘাস থাকলে পাট গাছগুলো মাটির সংস্পর্শে আসে না, ফলে পাটের রং ভালো থাকে। ঘাস না থাকলে কিছু খড় বিছিয়ে তার উপরও জাক দেওয়া যায়। জাকের উপর কচুরীপানা বা খড় বিছিয়ে দিলে খুব ভালো হয়, তবে কখনই সরাসরি মাটি দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে না।
জাগ দেওয়ার পর নিয়মিত গাছ পরীক্ষা করে দেখতে হয় যাতে বেশি পঁচে না যায়। আঁশ মাটিতে বসিয়ে না নিয়ে পানিতে ভাসিয়ে নেয়া ভালো। কেননা তাতে আঁশে মাটি, কাঁকর থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। এরপর পরিষ্কার পানিতে ধোয়া দরকার।
পানির অভাব দেখা দিলে অথবা জাগ দেওয়ার জায়গা না থাকলে পাট গাছ না পঁচিয়ে পাট গাছের ছাল পঁচানো যায় এবং এতে পঁচন তাড়াতাড়ি শেষ হয়। এ জন্য বাঁশের খুটির মাথায় ইংরেজি অক্ষর ইউ-এর মতো করে কেটে তার মাঝে পাট গাছ রেখে খুব সহজে গাছ থেকে ছাল ছড়ানো সম্ভব।
এরপর চাড়িতে বা চারকোণা গর্ত করে পাটের ছাল জাগ দেওয়া যায়। পঁচানোর সময় পঁচন পানিতে যদি ছালের ওজনের আনুমানিক ৩৭ কেজি ওজনের জন্য ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে দেওয়া যায় তবে পঁচন আরও তাড়াতাড়ি হয়।
সঠিক পদ্ধতিতে পাট না পঁচানোর জন্য অথবা পঁচন পানির অভাবজনিত কারণে পাট আঁশ ছালযুক্ত ও নিন্মমানের হলে পাট আঁশের ওজন প্রতি ৩৭ কেজিতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া পানিতে মিশিয়ে আঁশের গোড়ায় ছালযুক্ত স্থানে ছিটিয়ে দিয়ে এক সপ্তাহ পলিথিন বা ছালা দিয়ে ঢেকে রেখে গোড়ার দিকটা পুনরায় ধুয়ে নিলেই আঁশ ছালমুক্ত হয় এবং আঁশের মানও ভালো হয়।
ধোয়া আঁশ কখনই মাটির উপর বিছিয়ে শুকাতে নেই। বাঁশের আড়, রেলিং, ঘরের চাল ইত্যাদিতে বিছিয়ে শুকানো ভালো। মনে রাখবেন উন্নতমানের আঁশের দাম সর্বোচ্চ এবং সবসময় এর ক্রেতা থাকে। পক্ষান্তরে নিম্নমানের অতিরিক্ত পঁচানো, কম পঁচানো, রং জলা, কালচে, বাকল, কাঠি লেগে থাকা আঁশের বাজার মূল্য সবসময়ই কম হয়ে থাকে।
এরই মধ্যে পাট পচে গেলে তা আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধোয়ার পর ৪০ লিটার পানিতে এককেজি তেঁতুল গুলে তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে, এতে উজ্জ্বল বর্ণের পাট পাওয়া যায়।
যেসব জায়গায় জাগ দেওয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়। তবে মনে রাখতে হবে পাট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ছালকরণ করতে হবে, তা না হলে পরবর্তীতে রোদে পাটগাছ শুকিয়ে গেলে ছালকরণে সমস্যা হবে।
এমএমএফ/জিকেএস