চুয়াডাঙ্গায় দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টা বাগান, দাবি মালিকের
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল মাল্টা বাগান। এ গ্রামের মরাগাঁঙ বিলের পাশ ঘেঁষে ৪০ বিঘা জমিতে এ মাল্টা বাগান করেছেন ভগিরথপুর গ্রামের পুরাতন পাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন বাবলু।
সাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন, শুধু খুলনা বিভাগে নয়, দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টার বাগান এটি। চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই বাগানের মাল্টা এখন ঢাকায় যাচ্ছে।
মাল্টা পাকা শুরু হলে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে সাখাওয়াত হোসেনের বাগান থেকে মাল্টা কিনে নিয়ে যাবেন। সাখাওয়াত হোসেনের সাফল্য দেখে গ্রামের অনেক যুবক এখন মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
এ ছাড়া অন্য কৃষকরাও মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে মাল্টা চাষের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শও নিচ্ছেন নতুন উদ্যোক্তারা। এবছর চুয়াডাঙ্গার ১২৭ হেক্টর জমির শতাধিক মাল্টা বাগান থেকে প্রায় ১১৯২ মেট্রিক টন ফল পাওয়া যাবে।
শৈশব থেকেই বৃক্ষ রোপণের নেশা ছিল শাখাওয়াত হোসেনের। নতুন কোনো ফল বা ঔষধি গাছের সন্ধান পেলেই তার চারা সংগ্রহ করে পরিত্যক্ত জমিতে অথবা রাস্তার দুপাশে সেটি রোপণ করতেন তিনি। বৃক্ষ রোপণের নেশা তার পিছু ছাড়েনি। নতুন কোনো ফলের সন্ধান পেলে এখনো ছুটে যান এবং চারা সংগ্রহ করে সেটি রোপণ করেন তিনি।
পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মচারী শাখাওয়াত হোসেন খুলনায় পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে চাকরি করার সময় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বেড়াতে যান। সেখানে মাল্টার বাগান দেখে মুগ্ধ হন তিনি।
সাখাওয়াত হোসেন বাবলু জানান, শুরুটা ২০১৩ সালের প্রথম দিকে। তখন খুলনার দৌলতপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে ২০টি বারি মাল্টা-১ জাতের চারা কিনে আনি। এরপর ১৪ কাঠা জমিতে চারাগুলো রোপণ করি। ২০১৫ সালে সবকটি গাছে ফল ধরলে তা দেখতে আশপাশের লোকজন ভিড় করতে থাকেন। পরে এসব গাছ থেকে কলম তৈরির পর পরিকল্পিতভাবে মাল্টা চাষ শুরু করি। প্রথমেই অন্যের ২০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে মাল্টার বাগান তৈরি করি। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ৪০ বিঘা জমিতে মাল্টা বাগান করেছি।
তিনি জানান, প্রায় দুবছর আগে আরও দুবিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বাও-৩ জাতের মাল্টা বাগান করেছি। ময়মনসিংহ থেকে এ জাতের চারা সংগ্রহ করেছি। গাছ রোপণের ৯ মাস পরই ফুল ধরতে শুরু করে। ফুল আসার অল্প দিনেই মাল্টা ফলে পরিণত হয়।
এ জাতের মাল্টা চাষে প্রথম বছরেই সফলতা পেয়েছি। বাও-৩ জাতের মাল্টা চাষে সফলতা পাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ জন্য জমি প্রস্তুতসহ চারা উৎপাদন এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ জাতের মাল্টা চাষে খরচ তুলনামূলক কম। পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় অল্প পরিমাণে। বছরে ৩-৪ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি গাছ থেকে ১৫ কেজি হতে ১৮ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
তিনি জানান, তার বাগানের মাল্টা চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকায় চলে যায়। বাগানে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। চলতি মৌসুমে ৪০ বিঘা জমি থেকে প্রায় কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি হবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাগানের মাল্টা বিক্রি শুরু হবে। তার সফলতা দেখে জেলার অনেকেই মাল্টা চাষে উদ্যোগী হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে সাখাওয়াত হোসেনের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বাগানের প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন আকৃতির কাঁচা মাল্টা। কাঁচা ফলে ভরে গেছে পুরো বাগান। গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা। সবুজ পাতার আড়ালে প্রতিটি ডালে ঝুলে আছে নজরকাড়া মাল্টা। চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলা থেকে বাগান দেখতে ছুটে এসেছেন অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক।
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর এলাকার যুবক রফিকুল ইসলাম জানান, আমি মাল্টা বাগান দেখতে এসেছি। গাছে যে পরিমাণে মাল্টা ঝুলছে তা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। বাস্তবে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আমি নিজে এখান থেকে চারা নিয়ে ২ বিঘা জমিতে বাগান করব।
বাগানের শ্রমিক হায়দার আলী জানান, বাবলু ভাইয়ের মাল্টা বাগান আমরা বেশ কয়েকজন মিলে দেখাশোনা করি। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। মাল্টা বাগান হওয়াতে অনেকেই এখন কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এখান থেকে উপার্জিত টাকায় জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪০ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। এবার ফলও হয়েছে বেশ ভালো। বারি মাল্টা-১ এর সম্প্রসারণ যদি আমরা করতে পারি এবং বাজারে এ মাল্টার যে চাহিদা রেয়েছে তাতে করে কৃষকরা বারি মাল্টা-১ চাষ করে লাভবান হবেন।
তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা বন্যামুক্ত এলাকা। বছরের মে মাস থেকে জুলাই মাসে মাল্টা গাছ রোপণের সময়। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বরে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়। এই অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। মাল্টা চাষের ব্যাপারে আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।
সালাউদ্দীন কাজল/এমএমএফ/জিকেএস