ছাদকৃষিতে সফল হতে যা করবেন
আমাদের দেশে ছাদকৃষি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রাজধানীতে ছাদকৃষি দিন দিন বাড়ছে। ছাদে এখন শুধু ফুল বা বাহারি গাছ নয়, শাক-সবজি, ফলমূল সবই চাষ করা হচ্ছে।
শুধু রাজধানী নয় বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়। ছাদ কৃষির প্রতি নগরবাসীর আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বহুমাত্রিক সুবিধা ও সাফল্যের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তবে অনেকেই ছাদ কৃষি করে সফল হতে পারছেন না। কারণ তাদের পূর্ব প্রস্তুতি নেই। তাই ছাদে বাগান করার আগে কিছু বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
ছাদের আকার ও অবস্থান: ছাদের আকার ছোট, মাঝারি বা বড় হতে পারে। এ আকার বিবেচনায় ছাদের কোন অংশে, কি কি, কত সংখ্যক বিভিন্ন ফল, সবজি, মসলা ও ঔষধি গাছ চাষ করা যাবে তা শুরুতেই নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্ধারিত ছাদ কতো তলা বিশিষ্ট, আশপাশে কতো তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং বা বড় আকারের গাছপালা আছে, সারাদিনে সেখানে আলো-বাতাস বা রোদ পাওয়ার সুবিধা বিবেচনায় বাগান সৃষ্টি করতে হয়।
ছাদের অবস্থান বেশি উঁচু হলে ঝড়-বাতাসের প্রভাব বেশি পড়ে। এজন্য বেশি লম্বা আকারের ফল গাছ ছাদে রোপণ করা ঠিক হবে না। এমন অবস্থানে গাছ হেলে পড়া, ডাল ভেঙে যাওয়া, ফল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য এক্ষেত্রে গাছকে ছেঁটে রেখে বেশি ওপরের দিকে বাড়তে না দেয়া ভালো।
ছাদের ধারণ ক্ষমতা: বাড়ির ছাদের ধারণ ক্ষমতার উপর নির্ধারণ করতে হবে কোন ধরনের গাছ লাগানো সম্ভব। যদি একটা বাগান বা বড় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেন তাহলে যে পরিমাণে মাটি লাগবে তার ওজন এবং পানি দেয়ার পরে তার ওজন কত হবে তা যেনে নিন।
গাছে পানি দেওয়ার ফলে মাটি ভিজে ওজন আরও বেড়ে যায়। তাই যখন ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা করবেন অবশ্যই জেনে নেবেন ছাদের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু। সবসময় খেয়াল রাখবেন বাড়ির যেন কোনো ক্ষতি না হয়। যদি ছাদের ধারণ ক্ষমতা কম হয় তাহলে অল্প মাটিতে ছোট গুল্মজাতীয় গাছের বাগান করুন।
ছাদে বাগান স্থাপন উপযোগী করা: প্রথমে অনেকেই ছোট বড় নানা প্রকার টবে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করে। তবে এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আনা সম্ভব হয় না। এ জন্য ছাদে রোপিত গাছের শিকড় যেন বেশি ছড়াতে পারে এবং বেশি সংখ্যক গাছ রোপণ করা যায় অথচ ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না এ ব্যবস্থা শুরুতেই নেওয়া দরকার।
পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা: ছাদে বাগান করতে গেলে পানির দরকার তাই কিভাবে পানি দিবেন সেই ব্যবস্থা আগে তৈরি করতে হবে। আবার বাগানের মাটি থেকে বের হওয়া অতিরিক্ত পানি ছাদের কংক্রিটের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও ছাদে আগাছা জন্মে ছাদের মেঝেকে পিচ্ছিল ও ক্ষয় করে ফেলে তাই পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে।
যদি টবে গাছ বোনা হয় তাহলে এর নিচে আরও একটি মাটির ট্রে রাখা হয়। এটি অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। উপরন্তু মাটির ট্রে পানি শোষণ করে সেটিকে ছাদের মেঝেতেই পৌঁছে দেয়।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি ছাদের মেঝেতে পানি নিরোধক কোনো কিছু যেমন পলিথিন, রং, টাইলস বা আলকাতরার একটা স্তর তৈরি করে তার উপরে যথাযথ একটা নিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা করা যায়। আবার অনেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছাদের এক কিনারা সামান্য ঢালু রাখেন এটিও বেশ ভালো উপায়।
সূর্যের অবস্থান: সবধরনের গাছে বেঁচে থাকার জন্য সূর্যালোক একটি অপরিহার্য বিষয়। তাই বাগানের নকশা তৈরি করার আগে ছাদের কোন দিক থেকে রোদ আসে এবং ঋতুভেদে রোদ কোনদিকে সরে যায় ইত্যাদি বিষয় দেখে নেওয়া ভালো। কত সময় ধরে সূর্যের আলো ছাদে পড়ে তার উপর ভিত্তি করে কোন ধরনের গাছ লাগাবেন তা নির্ধারণ করতে হবে।
বাতাস চলাচলের দিক: পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল সবধরনের গাছের জন্যই ভালো। তবে অতিরিক্ত বাতাস গাছের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও ঝড়ো বাতাসে গাছ নুয়ে পড়তে পারে। তাই ছাদে বাগানের নকশায় অন্যান্য অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের দিক ও বিবেচনায় রাখা দরকার। ছাদ যদি খুব উঁচুতে হয় এবং আশপাশে আর কোনো উঁচু দালান না থাকে তবে বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেড়া দিতে হবে। বাতাস যেন মাটির আর্দ্রতাও কেড়ে না নেয় তা নিশ্চিত করতে মাটির উপর খড়ের বা প্লাস্টিক চাদরের আবরণও দিতে পারেন।
মাটি ভরাট করা: ছাদের বাগানে যেভাবে মাটি ভরাট করা যায় তা হলো কোন পাত্র বা টবের মধ্যে অথবা ছাদকে পানিরোধী করে সরাসরি মাটি ফেলে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। প্রথম ক্ষেত্রে ছোট ছোট টব বাছাই না করে বড় ট্রে বা প্লাস্টিকের বাক্স নেওয়া যেতে পারে। অনেকেই সিমেন্টে ঢালাই করা বড় টব বানিয়ে নেন।
তবে এ ধরনের টবের ওজন অনেক বেশি হয় ফলে ছাদের ধারণ ক্ষমতার বড় অংশই কংক্রিটের টব দখল করে ফেলে। টব বা সরাসরি মেঝে যেভাবেই মাটি ফেলা হোক না কেন, মাটির ধরণ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। ছাদের বাগানের মাটি এমন হতে হবে যেন তা হালকাও হয় এবং পানিও ধরে রাখতে পারে। বেলে মাটির সঙ্গে সবুজ সার মিলিয়ে তৈরি করা মাটিই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়।
গাছ নির্বাচন: গাছ নির্বাচন ছাদ বাগানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ওই গাছটি ছাদ-বাগানের জন্য কোন কাঠামোতে লাগানো হবে এবং তার পরিচর্যার ধরন কী হবে। ছাদে সব সময় ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগানো যেতে পারে।
যেসব গাছের শিকড় বেশি গভীরে প্রবেশ করে সেসব গাছ ছাদে লাগাবেন না। শিকড় পাশের দিকে বেশি ছড়ায় এমন গাছই ছাদ বাগানের জন্য উৎকৃষ্ট। বীজের চারা নয় কলমের চারা লাগালে অতি দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া চৌবাচ্চা আর টবে সবজির বীজ বপন করেও চাষ করা যায়।
এমএমএফ/জিকেএস