কলা পাতা হলুদ হয়ে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষার উপায়
কলা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল। এটি সারাবছর পাওয়া যায়। কলাগাছ ও কলাপাতা পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। কলা চাষে আমাদের দেশের কৃষকরা দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ করে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কলা চাষ অন্যান্য ফসল চাষাবাদের চেয়ে কিছুটা কম পরিশ্রমের। তবে কলা চাষ করে বেশি লাভবান হতে হলে কিছু বিষয়ে শুরু থেকেই খেয়াল রাখতে হবে। কলাগাছের কিছু রোগ-বালাই রয়েছে। যেমন,- পাতা হলুদ হয়ে বোঁটার কাছে ভেঙে ঝুলে পড়ে ও গাছ আস্তে আস্তে মারা যায়। এটি মূলত ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে।
কলার তিনটি প্রধান রোগের মধ্যে পানামা রোগ অন্যতম। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের প্রতিকার হিসেবে রোগমুক্ত গাছ লাগাতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন জাতের চাষ করতে হবে। যেমন,- বারিকলা-১ ও বারিকলা-২। আক্রান্ত জমিতে পরের বছর কলা চাষ করা যাবে না। এ ছাড়া টিল্ট-২৫০ ইসি (০.০৪%) ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় আক্রান্ত গাছে প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যেতে পারে।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব জাতের আবাদ হচ্ছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, কবরি, মেহেরসাগর ও বীচিকলা অন্যতম।
পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত উঁচু জমি কলা চাষের জন্য উপযুক্ত। উর্বর দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য ভালো। চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।
কলার চারা বছরে ৩ সময়ে রোপণ করা যায়। প্রথম রোপণকাল: আশ্বিন-কার্তিক সবচেয়ে ভালো সময়। দ্বিতীয় রোপণ কাল: মাঘ-ফাল্গুন ভালো সময়। দ্বিতীয় রোপণকাল: চৈত্র-বৈশাখ মোটামুটি ভালো সময়।
যে নিয়মে কলার চারা রোপণ করবেন তা জেনে নিন এবার। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ মিটার। চারা রোপণের মাসখানেক আগেই গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের আকার হবে ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া ও ৬০ সেন্টিমিটার গভীর। গর্ত তৈরি হয়ে গেলে গোবর ও টিএসপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে।
রোপণের জন্য অসি তেউড় চারা ভালো। অসি তেউরের পাতা সরু, সুঁচালো এবং অনেকটা তলোয়ারের মতো, গুড়ি বড় ও শক্তিশালী এবং কাণ্ড ক্রমশ গোড়া থেকে ওপরের দিকে সরু হয়। তিন মাস বয়স্ক সুস্থ সবল তেউড় রোগমুক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
অর্ধেক গোবর জমি তৈরির সময় এবং অবশিষ্ট অর্ধেক গর্তে দিতে হবে। অর্ধেক টিএসপি একই সঙ্গে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া, অর্ধেক এমপি ও বাকি টিএসপি জমিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই থেকে আড়াই মাস পর গাছ প্রতি বাকি অর্ধেক এমপি ও অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। মোচা বের হওয়ার সময় অবশিষ্ট ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপণের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তখনই সেচ দিতে হবে। এছাড়া শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দেওয়া দরকার। বর্ষার সময় কলা বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে তার জন্য নালা থাকা আবশ্যক। মোচা আসার পর গাছপ্রতি মাত্র একটি তেউড় বাড়তে দেওয়া ভালো।
তথ্যসূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস
এমএমএফ/জিকেএস