ভোলায় প্রথম বারি তরমুজ চাষে সফল কৃষক
ভোলার চরাঞ্চলে প্রথমবারের মতো বারি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। আর প্রথমবারেই সফলতা পেয়েছেন তারা। ক্ষেতে কম খরচ করে অধিক ফলনও পেয়েছেন তারা। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বারি তরমুজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তাই বেশি দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। তবে আগামীতে আরো বেশি জমিতে বারি জাতের তরমুজ চাষ করার পরিকল্পনা করছেন তারা। অন্যদিকে এবছর বারি তরমুজ চাষিদের সফলতা দেখে নতুন নতুন অনেক কৃষক এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বুকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে প্রতি বছরই বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করে আসছেন কৃষকরা। তবে এবছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ ভোলার সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর, ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ভেলুমিয়া চর ও উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চর কুমারিয়ায় নতুন জাতের বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে। ক্ষেতে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় কম পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে ব্যাপক সফলন পেয়েছেন কৃষকরা। ফলে হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকদের মুখে। আর ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ভোলা, বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা।
মাঝের চর এলাকার কৃষক মো. মিজাম ফরাজী জানান, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে মাঝের চরে বিভিন্ন জাতের তরমুজের চাষ করেন। এবছর তিনি ২০ শতাংশ জমিতে প্রথমবারের মতো বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ চাষ করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ ভোলা অফিস থেকে বীজ, সার কীটনাশক বিনা মূল্যে দিয়েছে। এছাড়াও আমার আরও প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ক্ষেতে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। এতে আমি খুবই খুশি।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত আমি ঢাকার পাইকারি বাজারে ৫০ হাজার টাকা বারি তরমুজ বিক্রি করেছি। ক্ষেতে এখনও যে ফলন আছে তাকে আশা করি আরো ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারব।
ভেলুমিয়া চরের কৃষক মো. সেলিম মৃধা জানান, তিনিও বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ চাষ করেছেন এক বিঘা জমিতে। ক্ষেতে তারও ব্যাপক সফল হয়েছেন। বারি জাতের তরমুজ খেতে খুবই সুস্বাদু হওয়ায় খুচরা ও পাইকারি বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমি বারি তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছি।
তিনি আরও জানান, এ তরমুজ ক্ষেতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম থাকে। তাই বেশি পরিমাণ সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।
একই এলকার কৃষক মো. নাসির জানান, আমাদের এলাকার বারি তরমুজ চাষ হয়েছে। ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। এটি অন্যান্য তরমুজের চেয়ে অনেক লাভজনক ফসল। আমিও আগামীতে ২ থেকে ৩ একর জমিতে বারি তরমুজের চাষ করব।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ ভোলার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গাজী নাজমুল হাসান জানান, এবছর আমরা ভোলার মাঝের চর, ভেলুমিয়ার চর ও চর কুমারিয়ায় ৬ জন কৃষক দিয়ে ১ একর জমিতে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ চাষ করিয়েছি। কৃষকদের আমরা বীজ, সার, কীটনাশকের পাশাপাশি পরামর্শ দিয়েছি। কৃষদের ক্ষেতে বারি তরমুজের ব্যাপক সফল হয়েছে এবং বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন। এতে কৃষকরা অনেক খুশি।
তিনি আরও জানান, বারি জাতের তরমুজ বছরে তিনবার চাষ করা যায়। আমরা এবছর বারি তরমুজ পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকদের চাষ করিয়ে সফলতা পেয়েছি। নতুন নতুন অনেক কৃষক বারি তরমুজ চাষ করার জন্য আগ্রহী হয়েছেন। আমরা আগামীতে অনেক কৃষকদের দিয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বারি তরমুজ চাষ করাব।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএমএফ/এএসএম