সিদ্ধিরগঞ্জে সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সবজি ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এবছর সবজির ফলন ভালো হওয়ায় বেশি লাভের আশা করছেন তারা। কৃষকরা বলছেন আবহাওয়া যদি ভালো থাকে তাহলে উৎপাদন আরও ভালো হবে। আর এক থেকে দুই সপ্তাহ পর এসব সবজি বাজারজাত করতে পারবেন এমনটাই আশা এখানকার কৃষকদের।
কৃষি অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে বর্তমানে ৫৬৩ হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০ হেক্টর জমিতেই শাক-সবজি চাষ হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ শিল্প এলাকা হওয়ায় প্রতিবছরই কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের ক্ষেত খামারগুলো লালশাক, পুঁইশাক, ধনেপাতা, পালংশাক, পাটশাক, কলমিশাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজিতে ভরপুর। সিদ্ধিরগঞ্জে মূলত অন্য ফসলের আবাদ হয় না। শাক-সবজি চাষ করেই চলে এখানকার কৃষকদের জীবন-জীবিকা। এসব শাক-সবজি সিদ্ধিরগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় দূর-দূরান্তের এলাকাগুলোতে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় খুব খুশি এখানকার কৃষকরা।
সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেক কৃষকই তার নিজের সবজি ক্ষেতের যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েকজন কৃষককে সবজি ক্ষেতে সার দিতে দেখা গেছে আবার কয়েকজনকে ক্ষেতে পানি দিতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার সবজি চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করছেন।
কয়েকজনকে আবার দেখা গেছে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে। তবে বেশিরভাগ কৃষকের পাটশাক চাষ করতে বেশি দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে কথা হলে জানা যায় এই সময়টায় পাটশাকের চাহিদা বেশি থাকে। তাই দাম ভালো পাওয়ার পাশাপাশি অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে বাকি সময়টায় এখানে লালশাক চাষবাদ হয় বেশি।
কথা হয় কলমিশাকের ক্ষেতে সার দেওয়া আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত তিনি। প্রতিবছর এই সময়টায় তিনি তার ১৮ শতাংশের জমিতে কলমিশাক চাষ করেন। প্রাকৃতিকভাবে পানিতে বা পানির ধারের ভেজা মাটিতে এই গাছ জন্মায় আবার বেশি যত্নেরও দরকার হয় না। তাই লাভবান বেশি হওয়া যায়। আবার বীজ বপনের মাত্র ২৫-৩০ দিনের মধ্যে শাক সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে কলমিশাক বাজারে বিক্রি করে আমার ভালোই আয় হচ্ছে।
আলাউদ্দীন মিয়া নামে আরেক কৃষক জানান, তিনি তার ৪ শতাংশ জমিতে এতোদিন লালশাক চাষ করেছেন। এখন তিনি পাটশাক চাষাবাদের জন্য মাটি প্রস্তুত করছেন। এ সময়টায় লালশাকের তুলনায় পাটশাক চাষাবাদ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
তবে তার জমির পরিমাণ কম হওয়ায় তার লাভ কম হয়। তিনি বলেন, পাটশাক চাষাবাদের জন্য মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করলে ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পরিমাণ গাছ লম্বা হলে অথবা তার চেয়ে কিছুটা ছোট থাকতেই বাজারে পাটশাক বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি। তাছাড়া বীজ বপনের অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পাটশাক বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। ফলে পাইকারি মূল্যে তিনি তা বিক্রি করে দেন।
শফিকুর রহমান নামে এক কৃষক জানান, কয়েকদিন ধরে রোদ বেশি পড়ায় দৈনিক দুবার নিয়মিত পানি দিতে হচ্ছে। এখানে তার ১০ শতাংশের দুটি ক্ষেত রয়েছে। একটিতে তিনি লালশাক এবং আরেকটিতে ধনেপাতা চাষাবাদ করেছেন। তিনি আশা করছেন আবহাওয়া যদি এমন ভালো থাকে তাহলে গত বছরের তুলনায় তিনি বেশি লাভবান হবেন।
কথা হয় ভ্যানগাড়ি নিয়ে শাক কিনতে আসা জলিল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, সবসময়ই তিনি জালকুড়িতে আসেন পাইকারি দামে শাক কিনতে। আজ তিনি পালংশাক কিনে তা বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে এখানে তিনি পাইকারি দামে শাক কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম জানান, শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিভাবে রোগবালাইমুক্ত শাক-সবজি উৎপাদন করা যায়, কিভাবে চাষাবাদ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায় এসব পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি। এছাড়া সরকার কৃষকদের জন্য কোনো প্রণোদনা দিয়ে থাকলে আমরা তা কৃষকদের মাঝে সুষমভাবে বন্টন করে থাকি।
এমএমএফ/জিকেএস