সবুজায়ন বৃদ্ধি গুরুত্ব পাচ্ছে এফএওর সম্মেলনে
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে আরও সবুজ ও কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৩৬তম এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনে।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মেলনবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, এ সম্মেলনের লক্ষ্য এশিয়া অঞ্চলের সবুজায়ন বৃদ্ধি ও জলবায়ুগত পরিবর্তন মোকাবিলায় কৃষির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো। ভালো পরিবেশেই শুধু ভালো জীবনযাপন করা সম্ভব। সেজন্য টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আরেক বড় লক্ষ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে সম্মেলনে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ প্যাসিফিকে যে খাদ্য যতটা পাওয়া যাচ্ছে সেটা যেন নিরাপদ ও পুষ্টিকর হয় তা নিশ্চিত করতে সব দেশ একমত রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
কৃষির উৎপাদন থেকে শুরু করে মার্কেটিং ও প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, কম্পিউটার রোবটের মতো উন্নত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ুগত পরিবর্তনের বিষয়টিও ডিজিটালাইজেশন করা, সেখানে অবহাওয়া পরিবর্তন থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতের বিষয়ে অলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। সকালে (বৃহস্পতিবার) বিভিন্ন দেশের সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দিয়েছেন। সবগুলো প্রস্তাব আকারে আগামীকাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ সম্মেলনে বাংলাদেশের উৎপাদন, খাদ্যঘাটতি মোকাবিলা নিয়ে প্রচুর প্রশংসা হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে দেখছে অন্যান্য এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো।
তিনি বলেন, এ সম্মেলনে এফএওর মহাপরিচালক এসেছেন। সংগঠনটি সারা বিশ্বের কৃষিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ সংস্থা থেকে প্রচুর সহায়তা পায়। প্রযুক্তির বিস্তার ও অর্থিক সহায়তা সবচেয়ে বেশি আসে। ফলে বাংলাদেশের জন্য এ সম্মেলন আয়োজন বেশ ইতিবাচক হবে। আমি মনে করি এটি একটি সুযোগ ছিল, সেটা আমরা ভালোভাবে করতে পেরেছি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ যে এত বড় সম্মেলনের আয়োজন করতে পারে সেটা সারা বিশ্ব দেখছে। তারা দেখে গেলো এ দেশ আর পিছিয়ে পড়ে থাকার দেশ নেই। এটি সবচেয়ে বড় অর্জন।
তিনি বলেন, শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, কীভাবে বাংলাদেশ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবকে মোকাবিলা করে গুণগত মানসম্পূর্ণ উৎপাদনের পাশাপাশি দেশ ও দেশের বাইরে সঠিক বিপণন করা হচ্ছে সেটা বাংলাদেশ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ এখন জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব পণ্য ও শস্য উৎপাদন এদেশে চিন্তা করা যেত না সেগুলো উৎপাদন হচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে এ সম্মেলনে আলোচনা হচ্ছে।
এসময় বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনকে মোকাবিলা করে কীভাবে আরও উৎপাদন বাড়ানো যায় সেটা এ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসবে। সেটা বাংলাদেশের জন্য বড় সহায়তা হবে।
বৃহস্পতিবার এফএওর এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের তৃতীয় দিন। এর আগে দু’দিন এফএওর সদস্য দেশগুলোর কৃষি সচিবদের নিয়ে সিনিয়র অফিসিয়াল মিটিং হয়েছে। এরপর শুরু হয়েছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক সেশনের উদ্বোধন করেন।
এশিয়া ও প্যাসিফিকভুক্ত ৪৬টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে এ সম্মেলনে। এফএওর মহাপরিচালক, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও ও সিভিল সোসাইটির ৮৮৫ জন প্রতিনিধি নিবন্ধন করেছেন এ সম্মেলনে।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ এফএওর সদস্য হয়। ১৯৫৩ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে প্রথম আঞ্চলিক সম্মেলন হয়েছিল। গত বছর এ সম্মেলন হয় ভুটানে। সেখানে পরবর্তী সম্মেলন বাংলাদেশে আয়োজনের পক্ষে সমর্থন দেন প্রতিনিধিরা।
এনএইচ/একেআর/এমআরএম/জেআইএম