আমের রাজ্যে বরই চাষে দ্বিগুণ লাভ!
আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরই চাষেও সফলতা দেখছেন চাষিরা। অনেকেই আম চাষে লোকসানের সম্মুখীন হয়ে গড়ে তুলেছেন বরই বাগান। নিজের জমির পাশাপাশি বর্গা নিয়ে বাগান করেও কেউ কেউ ফলন ও দামে খুশি। বলসুন্দরী, রূপসীসহ কয়েক জাতের বরইয়ে সেজেছে অধিকাংশ বাগান। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বরই চাষ।
আম চাষে লোকসানের সম্মুখীন হয়ে তুফান আলী বর্গা নেন ১৪ বিঘা জমি। চাষ করেন বলসন্দুরীসহ কয়েক জাতের বরই। দুই বছরে সব গাছই ফলবতী এখন। বাজারে চাহিদাও ভালো। দামও বেশি। এবার খরচের প্রায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন এই চাষি। গত বছর করোনার কারণে লোকসান হলেও এবছর ১৫ লক্ষাধিক টাকা বিক্রির আশা তার।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বরই বাগান গড়ে তুলেছেন তুফান আলী। তার বাগানে শোভা পাচ্ছে বলসুন্দরী, রূপসী, কাশমেরিসহ বিভিন্ন জাতের বরই। তার আশা কোনো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১৫ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন এবার।
তুফান আলী জাগো নিউজকে বলেন, আম চাষে লোকসান হওয়ায় দুই বছর আগে বরই চাষ শুরু করি। কিন্তু গত বছর করোনার কারণে বরইয়ের দাম না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। এবছর ক্ষতি কাটিয়ে উঠবো বলে আশা করছি। আমার বাগানের সব গাছে বরই ধরেছে। এবার খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। ফল পরিপক্ব হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিক্রিও শুরু করেছি।
‘এবার বলসুন্দরী বিক্রি করছি ৫০ টাকা, কাশমেরি ৪০ ও রূপসী ১২০ টাকা কেজি দরে। তবে এসব বরই আমি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি না। চট্টগ্রাম, ফেনী ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি।’
তিনি আরও বলেন, আমার বাগানে শিলাবৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে দাম ভালো পেলে এমন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। অন্য ফসলের চেয়ে বরই চাষে খরচ অনেক কম। আমার কাছে বলসুন্দরী জাতের বরই বেশ জনপ্রিয় বলে মনে হচ্ছে। এ বরইয়ের চাহিদা অনেক বেশি, ফলনও ভালো। আর পোকার আক্রমণও কম। এ অঞ্চলের অনেক বাগানে বলসুন্দরীর চাষ হচ্ছে।
গোমস্তাপুর উপজেলার বরই চাষি হাফেজ আলী জাগো নিউজকে বলেন, এবছর নিজের তিন বিঘা জমিতে বরই চাষ করেছি। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। ফল অনেক ধরেছে। ফলের ভারে অনেক গাছের ডাল ভেঙে পড়ছে। আমার বাগানে বলসুন্দরী জাতের বরই বেশি। আশা করছি এই তিন বিঘা বরই বাগান থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবো।
ইসলামপুর এলাকার রবিন আলী বলেন, এবার ভালো ফল ধরেছে। গত বছরের তুলনায় খরচও হয়েছে কম। এবার দামও ভালো। গত বছর যে বরই বিক্রি করেছিলাম ১০-১৫ টাকা কেজি দরে, এবার সেই বরই বিক্রি করছি ৫০-৭০ টাকায়।
নয়াগোলা এলাকার আমিরা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক ও বরই চাষি বাবু ইসলাম বলেন, গত পাঁচ বছর ধরেই আমরা বরই চাষ করে আসছি। কিন্তু গত বছর দাম না থাকায় বরই বিক্রি করে গাড়ি ভাড়ার টাকাই ওঠেনি। এবছর পাঁচ বিঘা জমিতে বরই রয়েছে। ফলও ধরেছে ভালো। আশা করছি সাড়ে ছয় লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। আমরা বলসুন্দরীসহ বিভিন্ন বরই গাছের চারাও বিক্রি করি। একবার এই চারা রোপণ করে ১৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ জেলার মানুষ বরই চাষে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। এবছর ৭৯০ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বলসুন্দরী বরই বেশি।
সোহান মাহমুদ/এমএমএফ/এএসএম/জেআইএম