দুই বছরে কৃষিপণ্য দ্বিগুণ করতে রোডম্যাপ
দেশ থেকে গত বছর এক বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্যের রফতানি হয়েছে। কিছু বাধা দূর হলেই আগামী দুই বছরের মধ্যে এ রফতানি ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। সে লক্ষ্যে রোডম্যাপ করেছে সরকার।
সোমবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে ‘শাকসবজি, আলু, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া রোডম্যাপে’ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় এ রোডম্যাপ তৈরি করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ ইউসুফ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার।
এ সময় শাকসবজি, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ড. মোহাম্মদ রাজু আহমেদ এবং আলু রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের গবেষণা সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ড. মো. রেজাউল করিম।
খসড়া রোডম্যাপ উপস্থাপনায় শাকসবজি, আলু, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা সমাধানের লক্ষ্যে বেশকিছু সুপারিশ প্রস্তাব করেন। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১.৬৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (সম্ভাব্য) এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুন পর্যন্ত) ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (সম্ভাব্য) আয় করা সম্ভব হবে। আলু রফতানির ক্ষেত্রে ২০২২ সালে ৮০ হাজার টন, ২০২৩ সালে ১ লাখ ২০ হাজার টন, ২০২৪ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার এবং ২০২৫ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আলু রফতানি করা সম্ভব বলে খসড়া রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোডম্যাপে শাকসবজি, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমিটি বেশকিছু সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো- কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে একটা পৃথক রফতানিমুখী গবেষণা সেল গঠন। বিদেশ থেকে কাঙ্ক্ষিত জাতের বীজ আমদানি করে দ্রুত রিজিয়নাল ট্রেইল গঠনের মাধ্যমে বিএডিসি ও ডিএই মাধ্যমে বীজ সম্প্রসারণ। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে জিএপি, জিপিপি ও জিএইচপি অনুসরণের মাধ্যমে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন। বিমানবন্দরের কার্গো স্থানে কৃষিপণ্যের জন্য পৃথক গেট, আলাদা জায়গা ও পৃথক স্ক্যানার মেশিন দ্রুত যুক্ত স্থাপন করতে হবে। সব বিমানে ২০-২৫ শতাংশ স্থান বাধ্যতামূলক ভাবে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য বরাদ্দ রাখা।
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য বিমানভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিমানবন্দর এলাকায় বিএডিসির তত্ত্বাবধানে এক একর জমিতে আধুনিক মানসম্মত হিমাগার স্থাপন। রফতানি চাহিদাভিত্তিক টেস্টসমূহের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বোর্ড কর্তৃক সনদ গ্রহণ। বেসরকারি পর্যায়ে পিপিপি মডেলে একটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপন। বেসরকরি পর্যায়ে চলমান ল্যাবসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান। বিএসটিআইকে ভারতের ৬ হাজার রুপির সমমূল্যে বাংলাদেশি টাকা ফি গ্রহণ এবং সাতদিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। রফতানিতে ভ্যাট ও কাস্টমস ডিউটি কমানোসহ আরও বেশকিছু সুপারিশ রয়েছে।
আলু রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত সুপারিশগুলো হলো- রপ্তানি বাজার সার্ভে করে ডিএএম, দূতাবাস এবং বিপিইএ জাতওয়ারি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ও প্রাক্কলন তৈরি করবে। বিএডিসি, বিএআরআই ও বিপিইএ প্রজেকশন অনুযায়ী সম্ভাব্য জাতগুলো নিয়ে প্রায়োগিক গবেষণা এগিয়ে রাখবে। রপ্তানিযোগ্য নতুন জাত সহজপ্রাপ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত, ভর্তুকি মূল্যে বীজ আমদানি করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ প্রাপ্যতা নিশ্চিতকল্পে বিএডিসি, বিএআরআই, আরডিএ প্রচলিত ও টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদন কার্যক্রম জোরদার করবে। নির্বাচিত এলাকায় চুক্তিবদ্ধ চাষ ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন করতে হবে। আগাম বৈদেশিক বাজার ধরার জন্য স্বল্পকালীন আমন ধান চাষ করা ও আগাম আলু রোপণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। হলোহার্ট, ব্রাউন রট, পটেটো টিউবার মথসহ বালাইমুক্ত আলু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে। প্রত্যয়ন ব্যবস্থা শক্তিশালী ও সহজলভ্য করতে হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রত্যয়ন দিতে হবে। প্যাকিং ব্যবস্থা আকর্ষণীয় ও টেকসই করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা এবং জাহাজীকরণ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। পণ্য পরিবহনে শিপিং করপোরেশন যেসব সুবিধা পায় আলু রপ্তানির ক্ষেত্রেও তা প্রদান করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
এনএইচ/এসএইচএস/এএসএম