সাপাহারে আম সংরক্ষণে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়
যে কোনো ফল সংরক্ষণে ফ্রুট ব্যাগিং একটি ভালো পদ্ধতি। ফ্রুট ব্যাগিং করা হলে ফলে যেমন ছত্রাক ও পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না। আম পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষায় কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তেমনি আমের গুণগত মান ভাল থাকে এবং স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। অন্যদিকে চাষিরা বাড়তি খরচ হওয়া থেকে বাঁচতে পারে।
আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর সাপাহার উপজেলা। সেখানে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। অধিক মুনাফা ও রোগ বালাইয়ের হাত থেকে আম রক্ষা করতে এই পদ্ধতি আম চাষিদের নিকট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিদেশে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আম চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন।
জানা গেছে, ফ্রুট ব্যাগিং চীন থেকে আমদানি করা হয়। আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হলে বিভিন্ন পোকামাকড়ে আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। এতে আম নষ্ট কম হলে ফলনও বৃদ্ধি পাবে। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে মানসম্পন্ন আম উৎপাদন সম্ভব।
এতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। মানসম্পন্ন আম বিদেশে রফতানি সহজ হবে। আম চাষিরা স্বল্পতে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রোগ বালাইয়ের হাত থেকে আম রক্ষা করতে এই পদ্ধতি আম চাষিদের নিকট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কীটনাশক, পোকামাকড় ও বিরূপ আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আম রক্ষা করতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। বাহিরের ক্ষতিকর কোনো প্রভাব এই ব্যাগের মধ্যে ঢুকতে পারে না। এ পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করার একটি সহজ ও উপযুক্ত পন্থা।
যা আমের গুণগত মান ও রঙ সতেজ রাখতে খুবই কার্যকর। গত ৫-৬ বছর থেকে উপজেলায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে চাষিরা। প্রাথমিক অবস্থায় হাতে গোনা কয়েকজন চাষি এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে এলাকার বেশিরভাগ চাষি এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। যাতে করে লাভবান হচ্ছেন এলাকার আমচাষিরা। ফ্রুটব্যাগিং করা আমের চাহিদা ভোক্তাদের কাছে অনেক বেশি।
সাপাহার গোডাউন পাড়ায় ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ এর তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, এ বছর গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো ও আম্রপালি প্রায় ২০ হাজার পিস আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছিলাম। আমের বয়স যখন ৪০-৫০ দিন হয় তখন এরমধ্যে কিছু ঝরে পড়ে। এরপর প্রতিটি আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়।
এতে করে আমে ছত্রাক ও পোকামাড়ক আক্রমণ করতে পারে না। কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ না করায় চাষিদের খরচ তুলনামুলক কমে যায়। এতে করে আমের আকার, চেহারা ও কালার ভালো থাকবে এবং সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করা যাবে।
তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং করা আম্রপালি আম বিক্রি করেছি ৮০-১০০ টাকা কেজি। এছাড়া গৌড়মতি আমি সেপ্টেম্বর মাসে বাজারে আসবে। দাম পাওয়া যাবে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি। ফ্রুট ব্যাগিং আম চাষিদের জন্য খুবই কার্যকর পদ্ধতি।
আম চাষি মাহফিজুর রহমান বলেন, চলতি বছরে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা আমের চাহিদা বেশ ভালো। আম ফ্রুট ব্যাগিং করার কারণে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে আম রক্ষা পায়। এতে আম থাকে বিষমুক্ত স্বাস্থ্য সম্মত। শুধু মাত্র গাছে সামান্য কীটনাশক স্প্রে করলেই হয়। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি একটু ব্যয় বহুল হলেও আম বিক্রি সময় ভালো দামে বিক্রি করা যায় এবং লাভও ভালো হয়।
সাপাহার উপজেলা কৃষি সম্প্রারণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮-১০ লাখ ফ্রুট ব্যাগ বিক্রি হয়েছে। ফ্রুট ব্যাগ মূলত মাছি পোকাসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে আমকে সুরক্ষা করে। এছাড়া আমের পচন রোধ কল্পে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি খুব ভালো কাজ করে। যার ফলে চাষিরা শেষ মৌসুমে বেশি দামে তাদের আম বিক্রি করতে পারে।
তিনি বলেন, লেট ভ্যারাইটি আমের মধ্যে আশ্বিনা ও বারি-৪ ও গৌরমতি জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করা যায়। এতে আম গুলো মৌসুমের শেষে অধিক দামে বিক্রি করা যায়। বর্তমানে এলাকার আম চাষিদের মাঝে এই ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আব্বাস আলী/এমএমএফ/জিকেএস