ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামেও খুশি কৃষক

জেলা প্রতিনিধি | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০৩:১১ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২১

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে। বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষক। চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে গোদাগাড়ী উপজেলায় দ্বিগুণ ভুট্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। এ বছর জেলার ৯ উপজেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৯ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে হেক্টরপ্রতি ভুট্টার উৎপাদন ৮ হেক্টরের নিচে নামে না। আর বরেন্দ্র এলাকার গোদাগাড়ীর বিল ও পদ্মা নদীর ওপারে চরের জমিতে উৎপাদন ১২ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গোদাগাড়ীর পিরিজপুর, বিদিরপুর, কৃষ্ণবাঢি, কাদিপুর, হরিশংকরপুর, বোগদামারী, মাছমারা, সোনাদীঘিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে। জমি থেকে ভুট্টা তোলা, মেশিনে ভুট্টা আলাদা করা, ভুট্টা সংগ্রহের পর গাছ কেটে পরিস্কার করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বাড়ির সামনে চোখে পড়ছে নারীদের রোদে ভুট্টা শুকানোর দৃশ্য। কোন কোন বাড়ির সামনে তারা রোদে শুকাচ্ছেন ভুট্টার ডগা ও ডালপালাগুলো। এসব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন তারা।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ও গবাদিপশু লালন-পালন বেড়েছে। আর মাছের ও গবাদিপশুর খাবার তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ছে ভুট্টার। তাই ভুট্টার চাহিদাও থাকছে সব সময়। এ কারণে দামটাও পড়ে যাচ্ছে না। চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। ভুট্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ভুট্টার দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।

গত সপ্তাহখানেক ধরে রাজশাহীর মাঠে মাঠে ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে। গোদাগাড়ী উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে ভুট্টা রোদে শুকাচ্ছিলেন কয়েকজন নারী। জানতে চাইলে তারা বলেন, জমি থেকে ভুট্টা তোলার পর বীজগুলো আলাদা করা হয়েছে। এটা একদিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর বিক্রি করা হয়। তাদের ভুট্টা শুকাতে দেখে বাড়ির ওপরই ফড়িয়ারা কিনতে আসছেন। কেনার জন্য দামও বলছেন।

হরিশংকরপুরের ভুট্টাচাষি টিপু সুলতান (৩২) বলেন, এবার ভুট্টার ফলন ভালো। বাজারে দামও ভালো। এখন প্রতিমণ ভুট্টা ৭২৫ থেকে ৭৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তাই গতবারের চেয়ে এবার লাভের আশা রয়েছে আরও বেশি।

কাদিরপুর এলাকার কৃষক রাসেল আহমেদ (৪০)। জমিতে শ্রমিকদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভুট্টা তোলায়। তিনি জানান, নিজের আড়াই বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। শুরুতে তিন কেজি বীজ লেগেছিল। বীজের দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। জমিতে ৩-৪ বার দিতে হয়েছে সেচ। এখন ভুট্টা তোলার সময় আটজন শ্রমিককে ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক দিতে হবে। সবমিলিয়ে তার খরচ প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তারপরও ভুট্টা বিক্রি করে তার ভালো লাভ থাকবে বলে জানান তিনি।

jagonews24

রাসেল বলেন, তার এই জমিতে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে। নিজের জমি না হলে খরচ আরেকটু বাড়ত। আড়াই বিঘা জমিতে একটা ফসল করার জন্য ইজারা নিলে ১৩ হাজার টাকার মতো লাগত। এই খরচ না হওয়ায় তার লাভের পরিমাণ বেশি থাকবে। তবে যারা জমি ইজারা নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন, এবার তাদেরও ক্ষতি হবে না। ফলন বেশি হওয়ায় সবাই লাভ করবেন।

দামপুকুর গ্রামে ভুট্টা ওজন করে বিক্রি করছিলেন রায়হান আলী (৩০)। তিনি জানালেন, ১০ কাঠা জমিতেই তার ১৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। জমি থেকে ভুট্টা তোলার পর থ্যাসাড় মেশিনে বীজগুলো আলাদা করা হয়েছে। তখন প্রতিমণ ভুট্টার জন্য থ্যাসাড় মালিককে দুই কেজি করে ভুট্টা দিতে হয়েছে। তারপরও সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ কাঠা জমিতেই তার ছয় হাজার টাকা লাভ থাকছে।

গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ গ্রামের ভুট্টাচাষি সারোয়ার শেখ জানান, চরে ৪৫ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ভুট্টার ফলন হচ্ছে এক বিঘা জমিতে। তবে পদ্মা পার করে ফড়িয়ারা ভুট্টা নিয়ে যান বলে তাদের এলাকায় দাম একটু কম। তারপরও ফলন বেশি হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে না। তবে আরেকটু দাম বেশি হলে আরও ভালো হতো। আমরা আরও বেশি লাভ করতে পারতাম।

এদিকে গোদাগাড়ীর পিরিজপুর গ্রামে মেসার্স জুবাইদা জামান শস্য ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী ফারুক হাসান তিতু জানালেন, চরাঞ্চল থেকে ফড়িয়ারা ভুট্টা কিনে এনে তার আড়তে বিক্রি করছেন। আর এদিকার চাষিরা নিজেরাই বিক্রি করে যাচ্ছে। এসব ভুট্টা কিনে গুদামে রাখছি। আমার এখান থেকে দেশের নানাপ্রান্তের ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকভর্তি করে ভুট্টা কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বলেন, রাজশাহীতে গেল কয়েক বছর ধরেই ভুট্টা চাষ বাড়ছে। তাই চাষিরা যেন ভালো বীজ পান, সেটা কৃষি বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আর ভালো বীজের কারণে ভাল উৎপাদনও হয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘স্বল্প সময়ে ভালো লাভ দেখেই চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছরও ভুট্টার বাজার ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও হয়েছে ভালো। আমরা আশা করছি আগামী বছর ভুট্টা চাষ আরও বাড়বে।’

ফয়সাল আহমেদ/এমএমএফ/এএসএম

আরও পড়ুন