কৃষিতে আলোর মুখ দেখছেন কলেজ ছাত্রী ফারিয়া
‘শহরে বেড়ে ওঠায় কৃষি কাজ নিয়ে তেমন একটা ধারণা ছিল না। পরিবারের কেউ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সেক্ষেত্রে অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে চাষাবাদ করে যে ফলন আমি ফলাতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে সফলতা। আর আমার ফলনই আমার উপার্জন’। কথাগুলো জাগো নিউজকে বলছিলেন কলেজ ছাত্রী ফারিয়া নূরুদ্দীন।
তিনি নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। বাবা এ কে এম নূরুদ্দীন নয়ন ও মা শাহীনূর উম্মে সুলতানা। তারা দুজনেই আইনজীবি। নেত্রকোনা সদর উপজেলার নসিবপুর এলাকায় তাদের বসবাস। আর ওই এলাকায়ই পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি কৃষি কাজে সময় দিচ্ছেন। বাবা-মা তাকে কৃষি কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন।
পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হলেও ফারিয়া কৃষিতে মন দিয়েছেন । যেখানে এই বয়সে কোনো মেয়ে কৃষি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ পর্যন্ত দেখায় না। সেখানে ফারিয়া ব্যতিক্রম। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০০ শতকেরও বেশি জমিতে কৃষি কাজ করছেন সাহসী এই উদ্যোক্তা। একে ব্যতিক্রমী ঘটনা বলা যেতে পারে। তার এই উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণা।
ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, যখন নবম শ্রণিতে পড়তেন তখন থেকেই নিজে কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল। অনলাইন বিজনেস, ফ্রিল্যান্সিং, টিউশনি এগুলোতে মন বসতো না। জমিতে চাষ করে ফসল ফলানোর কাজটা তার ভালো লাগে। এখান থেকেইে কৃষিতে আসা। নিজেদের জমি ছাড়াও লিজ নিয়ে বিভিন্ন রকম সবজির বাগান করছেন।
]
ফারিয়া জানায়, ২০১৯ সালের আগস্টে তার এলাকার বন্ধু তানভীরের সাথে সবজি চাষ নিয়ে আলোচনা করে ব্রকলি চাষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বছর ২০ শতক জমিতে ব্রকলি চাষ করেন। তখন থেকেই তার কৃষির যাত্রা শুরু। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ব্রকলি চাষে আশানুরূপ ফলন হয়েছে এবং তা বিক্রি করে প্রত্যাশিত মূল্য পেয়েছি। এজন্য কৃষিতে উৎসাহ বেড়ে গেছে।
চলতি বছর ২১০ শতক জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। এর মধ্যে স্কোয়াশ, রেড ক্যাবেজ ও লেটুস বিটরুট উল্লেখযোগ্য। এগুলোতেও ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন ফারিয়া। এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন আগাম বিভিন্ন সবজি চাষ করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
কৃষি কাজের সঙ্গে আবহাওয়ার বিষয়টা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থাৎ, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কৃষকদের কাজ করতে হয়। কৃষির মতো চ্যালেঞ্জিং কাজ কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কৃষি কাজটা আসলেই খুব চ্যালেঞ্জিং। কারণ এটা পুরোপুরি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং সতর্কভাবে কাজটা করলে অনেকটাই সহজ হয়ে যায়’।
কৃষি নিয়ে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। ফারিয়া বলেন, ‘ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ছাড়াও আরো অনেক কারণে অনেক কৃষক কৃষিবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন। যা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। কৃষকরা যেন উৎসাহ নিয়ে কৃষি কাজ করতে পারে। এই নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছে আছে’।
পড়ালেখার পাশাপাশি যারা কৃষিতে আসতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে ফারিয়া বলেন, 'যে সবজি চাষ করতে চান, সে সবজি বাজার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন। প্রথমে অল্প জমি দিয়ে শুরু করতে হবে'।
তিনি আরো বলেন, 'আমরা যারা তরুণ-তরুণী আছি, আমাদের এখন কৃষিতে হাল ধরতে হবে। উন্নত কৃষি নিয়ে কাজ করতে হবে। কৃষি এবং কৃষক বাঁচলেই বাঁচবে দেশ, বাঁচবো আমরা'।
এমএমএফ/জিকেএস