রাজশাহীর কৃষকের সুদিন ফিরেছে পাট চাষে
পাটের দাম নিয়ে সংশয় নেই, সোনালি আঁশে কৃষকের সুদিন ফিরেছে। পাট ওঠার শুরুর দিকে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এমন দাম এই প্রথম বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সংশ্লিষ্টরা। পাটের বেশি দাম পাওয়ায় আনন্দিত কৃষক এমনকি ব্যবসায়ীরাও।
রাজশাহী রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহকারী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বলছেন, এক সময় বাংলাদেশকে বলা হতো সোনালি আঁশের দেশ। যদিও সেই ধারাবাহিকতা থেকে কিছু বিচ্যুতি ঘটেছে। তবে বছর পাচেক থেকে প্রতিবছরই পাট রফতানি বেড়েছে। এ কারণে পাটের দামও বেড়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি ৮৮ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৫.৭৪ ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৯. ৫৫ ডলার ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৫২৮.১৫ ডলারের পাট রফতানি হয়েছে রাজশাহী থেকে। পাটের দাম বাড়ার পেছনে এটিও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলছেন, রাজশাহী জেলায় গত বছর (২০২০) পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ২৬ হেক্টর বেড়ে চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে। আর ২০১৯ সালে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছিল। পাটের চাষ বেশি, ফলন ভালো ও দামও বেশি। ‘পাটের এতো দাম এই প্রথম শুনলাম’বলে মন্তব্য করেন এই কৃষিবিদ।
গোদাগাড়ী উপজেলার পাট ব্যবসায়ী ওয়ালিউর রহমান জানান, গত বছর (২০১৯) এক মণ পাট বিক্রি হয়েছে ১৪০০-১৫০০ টাকায়। পরের দিকে দাম বাড়ে কিছুটা। পাট উঠার শুরুর দিকে ১৬০০-১৮০০ যায়, তারপর ২০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
পরের দিকে প্রতি সপ্তাহে ২০০-৩০০ টাকা করে বেড়েছে প্রতি মণে। এভাবে বাড়তে বাড়তে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে পাটের দাম। তবে এখনও বলা যাচ্ছে না, পাটের দাম আরও বাড়বে কিনা। কারণ বিশ্ব বাজারে সুতার দাম বেড়েছে, তাই পাটের দাম বেড়েছে বলে বড় বড় আড়ৎদাররা জানায়।’
পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের পাটচাষি ইমরান আলী জানান, ৭ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছিল। দাম পাবো না বলে প্রথমের দিকে পাট বিক্রি করেছিলাম। তবে সেই তুলনায় এখন ডাবল পাটের দাম। ভাবতে পারিনি পাটের মূল্য এতো বেড়ে যাবে।
পাটের সম্ভাবনার বিষয়ে কৃষিবিদ শামসুল বলছেন, পাটের দাম ভালো থাকায় কয়েক বছর থেকে পাটের আবাদ বেড়েছে। যদিও সরকারি পাটকল বন্ধ। তবুও পাট বিক্রিতে কৃষকের সমস্যা হবে না। কারণ বেসরকারি পাট কলগুলো রয়েছে। এছাড়া বিদেশে পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস থেকে মানুষ ফিরে আসছে। তাদের মধ্যে পাটের তৈরি ব্যাগের চাহিদা বেশি। আর তাই পাট চাষে কৃষকের সুদিন ফিরেছে।
এমএমএফ/জিকেএস