ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

সমন্বিত শাক-সবজি চাষে স্বাবলম্বী হতে চান জলিল

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২১

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কাঁচিচর এলাকার চরমাধবরাম গ্রামের মৃত নায়েব আলীর ছেলে মো. আব্দুল জলিল (৩৮)। পেশায় দিনমজুর। দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করেছেন। দিনমজুরের কাজ করে আয়ের টাকা থেকে পরিবারের কাছে কিছু অংশ পাঠিয়ে বাকি টাকা জমা করেন।

দীর্ঘসময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় কৃষিকাজ করার পর নিজে কিছু একটা করার মনস্থির করেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে ফিরে আসেন নিজ জেলা কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রামে ফিরে জেলা শহরের হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা মিঠু মিয়ার কাঁচিচরের চরমাধবরাম গ্রামে থাকা ২৫ বিঘা পরিত্যক্ত জমি লিজ নেন।

জমিতে থাকা জঙ্গল পরিষ্কার করে দীর্ঘদিনের কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কোনো জনবল না খাটিয়ে একক শ্রমে ও নিজের প্রচেষ্টায় ২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাত বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। এবং ৫০০ পেঁপের চারা লাগিয়েছিলেন। সেগুলোতে পেঁপে ধরায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন।

jagonews24

এছাড়া আদা চাষ করেছেন ২০ শতক জমিতে। এক একর জমিতে ২ হাজার ৫০০ পারটেক্স জাতের মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। ২০ শতক জমিতে বরবটি চাষ করেছেন। মরিচ ও পুঁইশাক চাষ করেছেন ২০ শতক জমিতে। মুলা ও পাটশাক লাগিয়েছেন ২০ শতক জমিতে। জমির বিভিন্ন অংশে প্রায় ৩০০ লেবু গাছ লাগিয়েছেন। এক বিঘা জমিতে ১৫০টি হাড়িভাঙা আমের গাছ লাগিয়েছেন।

২০ শতক জমিতে প্রায় ৩০০ পানি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। ২০ শতক জমিতে ঝিঙে। আপেল জাতের টমেটো লাগিয়েছেন ৫ শতক জমিতে। এবং লাল তীর হাইব্রিড জাতের ঢেঁড়শ ১০ শতক জমিতে। তিন জমিতে থাকা পুকুরে সিলভারকার্প, গ্রাসকার্প, রুইসহ নানা প্রজাতির মাছ চাষ। এছাড়াও পুকুরের একদিকে প্রায় দুই বিঘা জমিতে মাচা তৈরি করে বিআরডিসি ও হাইব্রিড জাতের শিম চাষ করেছেন।

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন গিয়ে জেলা সদরের চরমাধবরাম রাম এলাকায় আব্দুল জলিলের প্রজেক্ট ঘুরে শাক-সবজি খেতের এমন চিত্র দেখা যায়।

jagonews24

আব্দুল জলিল জানান, আমরা কৃষক পরিবার। এক সময় আমাদের অনেক জমিজমা ছিল। ধরলার ভাঙনে সবকিছু বিলীন হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেছি। আগে আরো তিনজন উদ্যোক্তা চেষ্টা করেও এই জমিতে কোনো কিছু তৈরি করতে সক্ষম হননি।

আমার একক শ্রম দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে এই শাক-সবজির খেত তৈরি করেছি। এই শাক-সবজি চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চাই। আশা রাখি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকা আয় করতে পারবো। আমি চাই আমার এই সবজি খেত দেখে এলাকার বেকার যুবকরা আগ্রহী হয়ে নিজেদের বেকারত্ব দূর করুক।

আব্দুল জলিলের ভাই আব্দুল হাকিম বলেন, আব্দুল জলিল অনেক কষ্ট করে এই প্রজেক্টটি করেছেন। এই প্রজেক্টটি তার বেকারত্ব দূর করবে। এবং সে ভালো কিছু করতে পারবে। তার এই প্রচেষ্টা দেখে ইতিমধ্যে এলাকার দু-তিনজন যুবক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা রাখি এলাকার বেকার যুবকরা আব্দুল জলিলের প্রচেষ্টা দেখে নিজেরাও কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন।

jagonews24

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদুর রহমান বলেন, আব্দুল জলিল বেকার না থেকে নিজ প্রচেষ্টায় এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। সে অত্যন্ত পরিশ্রমী। আশা রাখি সে ভালো কিছু করতে পারবে। এলাকার বেকার যুবকরা তাকে অনুসরণ করে নিজেরাও উদ্যোগী হবে বলে আমি মনে করি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ধানের চেয়ে শাক-সবজি অত্যন্ত লাভজনক। শাক-সবজি চাষে তেমন কীটনাশক ও স্প্রের প্রয়োজন হয় না।

কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী শাক-সবজি চাষ করলে ওই কৃষক এক বছরের মধ্যেই কয়েক প্রকারের শাক-সবজি চাষ করতে পারবেন। এবং শাক-সবজি চাষে খরচ কম থাকায় অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। পরিকল্পনা অনুযায়ী শাক-সবজি চাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।

এমএমএফ/জিকেএস

আরও পড়ুন