গত ৩০ বছরে দ্রুত কমেছে সাপগলা পাখি
বর্তমানে এরা প্রায়-বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশে সংকটাপন্ন। একসময় প্রচুর দেখা গেলেও বর্তমানে এদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। পাখিরাজ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। গত ৩০ বছরে দ্রুত কমে এ পাখি এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। বলছিলাম গয়ার পাখির (সাপগলা) কথা।
এরা পাখি হলেও পানির নিচে একটানা কয়েক মিনিট থাকতে পারে। এদের প্রিয় খাবার মাছ, সাপ ও ব্যাঙ। ক্ষিপ্র গতিতে ঝাপিয়ে পড়ে মাছ শিকার করে। মাছ শিকারের জন্য যখন পানির গভীরে সারা শরীর নিয়ে যায়; তখন দেখতে অনেকটা সাপের মত মনে হয়। এদের দেহের এক তৃতীয়াংশ গলা আর ঠোঁট।
পানির মধ্যে সাঁতার কাটার সময় এদের লম্বা গলা ও মাথা এমনভাবে রাখে, যা দেখতে অনেকটা সাপের মতো লাগে। তাই হয়তো এদেরকে ‘সাপ পাখি’ বা ‘সাপগলা পাখি’ নামেও ডাকা হয়। পাখিটির বাংলা নাম গয়ার (ডার্টার বা ওরিয়েন্টাল ডার্টার), বৈজ্ঞানিক নাম Anhinga melanogaster।
আকারে একটু বড় হওয়ার কারণে শিকারিদের নজরে পড়ে বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক একটি পাখির ওজন প্রায় দেড় কেজি। দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার। সাধারণত পানির আশেপাশে এরা বাসা বাঁধে। গাছের ওপর শুকনো সরু ডালপালা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে বাসা বানায়।
জুন-ডিসেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম। স্ত্রী পাখি সাধারণ পাঁচ-ছয়টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে ২৪-২৬ দিনের প্রয়োজন হয়। বাচ্চাদের লোম ১২ দিনের মধ্যে গজিয়ে যায়। উড়তে শেখে ৪৫ দিনে। এদের প্রিয় খাবার মাছ হলেও ব্যাঙ, শামুক, ফড়িং ও জলজ উদ্ভিদের নরম ডগা খায়। এমনকি বাগে পেলে ঢোঁড়া সাপের বাচ্চাও খায়।
বিলুপ্তির কারণে এদের আগের মত দেখা না গেলেও বর্তমানে দেশের বড় বড় হাওর, বিল, নদী ও হ্রদে মাঝেমাঝে দেখা মেলে। সচরাচর একা, জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। পানিতে ডুব দিয়ে ঠোঁট দিয়ে মাছ শিকার করে। ‘চিগি-চিগি-চিগি’ স্বরে ডাকে। পানিতে পুঁতে রাখা বাঁশে, গাছের শাখায় বা মাটিতে সুন্দর ভঙ্গিমায় ডানা মেলে রোদ পোহায়।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‘একসময়ে দেশের সব জলাশয়ে এমনকি পুকুরেও এদের দেখা যেত। আমি নিজেও পুকুরে গয়ার পাখি দেখেছি। বর্তমানে এদের বড় বড় হাওর ছাড়া দেখা যায় না। একেকটি হাওরে গড়ে ৫-১০টার মত দেখা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত অবৈধ শিকার, বাসস্থানের অভাব, খাবার সংকটের কারণে এ পাখি কমে যাচ্ছে। এরা বাসা করত বড় বড় বাঁশঝাড়ে। এদের প্রিয় খাবার মাছ, সাপ ও ব্যাঙ। কিন্তু সব কিছুই দিনদিন কমে যাচ্ছে। খাদ্য ও বাসস্থান ছাড়া বংশ বাড়াবে কী করে?’
এসইউ/এমকেএইচ