শ্রীপুরে কাঁঠাল চাষে বাধা, অসহায় চাষিরা
দেশের প্রায় সব জায়গায়ই কাঁঠাল ফল পাওয়া যায়। উৎপাদনে গাজীপুরের অবস্থান প্রথম সারিতে। জেলার অন্যান্য উপজেলার মধ্যে শ্রীপুর কাঁঠাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এ মৌসুমে শ্রীপুরের প্রতিটি বাড়িতে একাধিক কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। তবে শিল্প-কারখানার প্রসার ও নগরায়নে প্রতিনিয়তই কমছে কাঁঠাল গাছের সংখ্যা। যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে; সে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হারিয়ে যাবে জাতীয় ফল কাঁঠাল।
স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্যমতে, কাঁঠাল চাষের জন্য লাল মাটি সমৃদ্ধ উঁচু চালা জমি হচ্ছে আদর্শ স্থান। আর গাজীপুরের মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় কাঁঠাল চাষের প্রসার ঘটেছিল ব্যাপকভাবে। একসময় গাজীপুরের কৃষি অর্থনীতির চালিকাশক্তির কেন্দ্র ছিল কাঁঠালকে ঘিরেই। তাই গাজীপুরকে বলা হতো কাঁঠালের রাজধানী। তবে ১৯৯০ সালের পর থেকে উঁচু চালা জমিতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় কাঁঠাল চাষে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। অনেকেই কাঁঠাল চাষে উৎসাহ হারিয়ে চালা জমিতে গড়ে তোলে বাড়ি-ঘর।
গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জেলায় ১০ হাজার ৩৫৮ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ১০ মেট্রিক টন। পরের অর্থবছরে চাষ হয় ৮ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৮ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চাষ কমে উৎপাদন হয় ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এভাবেই প্রতিনিয়ত কমছে কাঁঠালের চাষ।
> আরও পড়ুন- হলুুদ ও লাল তরমুজ চাষে সফল অর্ধশত গ্রামের কৃষক
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয় শ্রীপুরে। আর জেলার সবচেয়ে কম কাঁঠাল উৎপাদন হয় কালিয়াকৈর উপজেলায়। একসময় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজার ছিল শ্রীপুরের জৈনা বাজার। তবে কাঁঠাল চাষ কমে যাওয়ায় এখন জৈনা বাজারের আগের জৌলুস নেই।
গাজীপুরের কাঁঠালকে ঘিরেই একসময় দেশের সবচেয়ে বড় বাজার বসেছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার, মাওনা চৌরাস্তা, মাস্টারবাড়ী এলাকায়। কাঁঠালের মৌসুমজুড়ে বাজারগুলোতে হাঁকডাক চলতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা কাঁঠাল কেনার জন্য আসতেন। কিন্তু নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে কাঁঠালের চাষ কমে যাওয়ায় এখন কাঁঠালের বাজার আর আগের অবস্থানে নেই। পাইকাররাও এখন আর আসেন না।
বাজারের আড়ৎদার খলিলুর রহমান খান বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে গাজীপুরে প্রতিনিয়ত কমছে কাঁঠাল চাষ। নতুনভাবে কেউ কাঁঠাল চাষে উৎসাহিত হচ্ছে না। ফলে এখন আগের মতো এ বাজারে কাঁঠাল আসে না।’
উপজেলার মাওনা বাজার এলাকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘কাঁঠাল চাষের প্রতিবন্ধকতা শিল্পায়ন ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়া। এছাড়া কাঁঠাল গাছ কেটে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হলেও নতুন করে লাগানো হচ্ছে না। এসব কারণে কাঁঠাল চাষ কমছে।’
> আরও পড়ুন- পুষ্টিমানে আপেল ও কমলার চেয়ে পেয়ারাই সেরা
নয়নপুরের নার্সারি ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘বছর দশেক আগেও আশপাশের জেলায় আমরা কাঁঠালের চারা সরবরাহ করতাম। এখন আর কাঁঠালের চারার কোন চাহিদা নেই।’
কাঁঠাল ব্যবসায়ী খসরু মিয়া জানান, বর্তমানে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে কাঁঠাল। কাঁঠাল ব্যবসায় লাভ কম হওয়ায় অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘একদিকে শিল্পায়ন অপরদিকে খাবারের ভিন্নতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কাঁঠালে আগ্রহ কমছে। আবার দেশীয় পরিবেশের ভারসাম্য হারানোয় কাঁঠালের ফলনও কমছে। তবে জাতীয় ফলের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নানা ধরনের গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ‘শিল্পায়নের কারণে গাজীপুরে কাঁঠাল চাষ কমে যাওয়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আশা করি কাঁঠাল চাষে আরও সমৃদ্ধ অবস্থানে যাবে গাজীপুর।’
শিহাব খান/এসইউ/এমকেএইচ