স্মার্টফোন বদলে দিয়েছে তিস্তাপাড়ের কৃষি
স্মার্টফোনের মাধ্যমে তিস্তাপাড়ের দক্ষিণ খড়িবাড়ীর হতদরিদ্র নারীদের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটিয়েছে। সবজি চাষে এনেছেন ব্যাপক সফলতা। কম খরচে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
জানা যায়, ২০১০ সালে অক্সফামের অর্থায়নে হতদরিদ্র নারীদের সাবলম্বী করার জন্য পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর আওতায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ১শ’ উদ্যমী নারীকে স্মার্টফোন দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির অর্থায়নে প্রকল্পটি টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামে কাজ শুরু করে।
প্রকল্পটি স্মার্টফোনের ওপর প্রশিক্ষণ, ফেসবুক আইডি খুলে দেওয়া, মেগাবাইট সরবরাহ, উপজেলা কৃষি অফিস, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও প্রতীক কল সেন্টারের এসএমএস ও প্রতীক ভয়েজ এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে। এছাড়া কৃষিতথ্য সংগ্রহ করে সবজি ও ফসল চাষ করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ফলে তিস্তাপাড়ের চরে পতিত জমিতে ফসল ও সবজি চাষ করে সফল হচ্ছেন তারা। পাশাপাশি স্মার্টফোন ব্যবহার করে এলাকার কৃষকদের সহায়তা করে আসছেন। এমনকী গুগলের মাধ্যমে অনলাইন সেবাও নিচ্ছেন।
> আরও পড়ুন- একটি পিঠা পার্ক পূরণ করছে তরুণদের স্বপ্ন
সূত্র জানায়, স্মার্টফোনের তথ্য পাওয়ার জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক কৃষি সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। এলাকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা টাওয়ার বা থ্রিডি পদ্ধতি ব্যবহার করে বস্তার মধ্যে মাটি ও জৈব সার মিশিয়ে সবজি চাষ করে আসছেন। যাতে বন্যায় কোন ক্ষয়-ক্ষতি না হয়।
প্রতীক প্রকল্পের উদ্যোক্তা শারীরিক প্রতিবন্ধী মুন্নি আখতার বলেন, ‘ আমরা বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করি। সেখান থেকে তথ্য বা কৃষি বিভাগের অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন পরামর্শ পাচ্ছি। এতে পরিবারের কৃষি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারছি। সর্বোপরি আমার বাবাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি।’
মুন্নি আখতার বলেন, ‘ভুট্টার মৌসুমে বাবা ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেন। রোপণের তিন মাস পর পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিলে প্রতীক কল সেন্টারে ফোন দিয়ে রোগের পরামর্শ চাইলে, তারা পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী বাবাকে ওষুধের কথা বলি। বাবা জমিতে তা প্রয়োগ করে সমাধান পান। ফলে এবার ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে।’
> আরও পড়ুন- তানিয়ার সেবায় বাঘে-বিড়ালে বন্ধুত্ব
ডিমলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতীক অ্যানিমেটরগণ ‘উপজেলা কৃষি অফিস ডিমলা’ ফেসবুক আইডির সাথে যুক্ত আছেন। প্রায়ই তারা কৃষিসংক্রান্ত সমস্যা ফেসবুকে পোস্ট দেন। তারা আমাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেন।’
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিস্তাপাড়ের ১শ’ নারী স্মার্টফোন ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তিতে কৃষিকাজ ও প্রাণিসম্পদ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এতে তিস্তাপাড়ের সাধারণ মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হচ্ছে। তারা সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে অবদান রাখছে।’
পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মন জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তিস্তাপাড়ের নারীরা এখন স্বাবলম্বী। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।’
জাহেদুল ইসলাম/এসইউ/এমকেএইচ