কম খরচে কাঁকড়া চাষ
বাংলাদেশের উপকূলীয় ও প্লাবন সংলগ্ন অঞ্চল কাঁকড়া চাষের জন্য উপযোগী। নদী বা মোহনায় খাঁচা বসিয়ে কাঁকড়া পালন করা হয় বলে কাঁকড়া প্রাকৃতিক পরিবেশেই তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। কম খরচে ভাসমান বাঁশের খাঁচায় কাঁকড়া পালন গরিব চাষীদের ভাগ্য খুলে দেয়।
খাঁচা তৈরি
প্রথমেই লাগবে বাঁশ। সঙ্গে লাগবে প্লাস্টিক ড্রাম আর সুতা। খাঁচার আয়তন অনুযায়ী এক বা ১.৫ সেন্টিমিটার মোটা করে ফালি করতে হবে বাঁশ। এরপর এগুলোকে শক্ত চিকন সুতা দিয়ে পাশাপাশি গেঁথে বানা তৈরি করতে হবে। বানাগুলোকে এবার খাঁচার আকৃতি (দৈর্ঘ-প্রস্থ-উচ্চতা) বুঝে পাশাপাশি সংযুক্ত করে বানাতে হবে খাঁচা। খাঁচাটি (৭-৩-১) ফুট আকৃতির হলেই সবচেয়ে ভালো হয়। এতে থাকবে ৬০টি প্রকোষ্ঠ। প্রত্যেক প্রকোষ্ঠের আয়তন (৭-৭-১০) ইঞ্চি করে হবে। ওপরের ঢাকনাটাও এমন বাঁধতে হবে যেন খাবার দেওয়া, পরিচর্যা আর স্থানান্তরে সুবিধা হয়।
পানিতে খাঁচা
পানিতে খাঁচা বসানোর ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটা ভালোভাবে হয় এমন খাল বা মোহনায় লোনা পানি বাছতে হবে। খাঁচাটাও বসাতে হবে এমন করে যেন ভাটার সময় নদীর তলায় লেগে না যায়। খাঁচার উপরের চার কোণায় চারটি প্লাস্টিকের ছোট ড্রাম বেঁধে দিতে হবে। যাতে এক বা দেড় ইঞ্চি ভাসিয়ে রাখতে পারে খাঁচাটিকে। নদীর তলদেশে শক্ত খুঁটি পুঁতে তার সঙ্গে সর্বোচ্চ জোয়ারের উচ্চতা মাথায় রেখে খাঁচাটিকে বেঁধে দিতে হবে। তাতে জোয়ার-ভাটায় ওঠা-নামা করবে খাঁচাটি।
কাঁকড়া মজুদ
১৮০ বা ২০০ গ্রাম ওজনের নরম খোলস আর গোরাল অপরিপক্ব এমন কাঁকড়াই মজুদ করতে হবে। এটি অভিজ্ঞ চাষীর পরামর্শ নিয়ে করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বছরের যে কোনো সময়ে কাঁকড়া মজুদ করা যায়, তবে বর্ষাকালই সবচেয়ে ভালো। আহত বা পা নেই এমন কাঁকড়া মজুদ করাটা ঠিক হবে না।
পরিচর্যা
প্রতিদিন সকাল আর বিকেলে কাঁকড়ার দেহের ওজনের ৫ ভাগ পরিমাণ খাবার দিতে হবে। কুইচ্যা বা ইলমাছ, তেলাপিয়া, ছোট মাছ, হাঙ্গরের মাংস, চিংড়ির মাথা ছোট ছোট টুকরা করে দেওয়া যেতে পারে খাঁচার একেকটি প্রকোষ্ঠে।
বাজারজাত
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যেই কাকড়াগুলো বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে যাবে। পুরো খাঁচা তুলে এনে চিমটি দিয়ে কাঁকড়া ধরতে হবে। খুব সাবধানে। কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে গেলে কিন্তু দাম কমে যাবে। ধরার সঙ্গে সঙ্গে পা বেঁধে ফেলতে হবে রশি দিয়ে।
সুবিধা
ভাসমান বাঁশের খাঁচায় কাঁকড়া পালন সহজ, কম ঝুঁকিপূর্ণ, স্থানান্তর যোগ্য, পরিবেশ অনুকূল আর লাভজনকও। তেমন বিনিয়োগ করতে হয় না বলে কম পুঁজিতেই অনেক লাভ করা যায়। কাঁকড়ার মৃত্যুর হারও কম, রোগ সংক্রমণের ভয়ও নেই। মাটি ও পানি দূষিত হয় না। কম জায়গায় অনেক বেশি কাঁকড়া পালন করা যায়।
এসইউ/আরআইপি