কুল চাষের সহজ নিয়ম
কুল একটি সুস্বাদু ফল। কোনো কোনো অঞ্চলে একে ‘বরই’ বলা হয়। এটি বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়, সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। আসুন জেনে নেই কুল চাষের নিয়ম-কানুন।
বংশবিস্তার
বীজ এবং কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা যায়। কলমের চারার বংশগত গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। বীজ থেকে চারা পেতে বীজকে ভেজা গরম বালির ভেতর দেড়-দুই মাস রেখে দিলে তাড়াতাড়ি গজায়। না হলে ৬-৮ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। কলমের চারা পেতে নির্বাচিত স্থানে বীজ বপণ ও চারা তৈরি করে তার উপর বাডিংয়ের মাধ্যমে কলম করে নেওয়া ভালো। বলয়, তালি অথবা টি-বাডিং যেকোনো পদ্ধতিতেই বাডিং করা যায়। তালি, চোখ কলমের চেয়ে সহজ। বাডিং করার জন্য বীজের চারার রুটস্টক বয়স ৯ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে। জাত, স্থান ও জলবায়ুভেদে মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুনে শুরু করে মধ্য-আষাঢ় থেকে মধ্য-ভাদ্র মাস পর্যন্ত বাডিং করা যায়। তবে মধ্য-বৈশাখ থেকে মধ্য-আষাঢ় উপযুক্ত সময়। এক্ষেত্রে সায়ন সংগ্রহের উদ্দেশে নির্বাচিত জাত এবং রুটস্টক উভয়েরই পুরনো ডালপালা মধ্য-ফাল্গুন থেকে মধ্য-বৈশাখ মাসে ছাঁটাই করে দিতে হয়। এরপর নতুন শাখাকে বাডিংয়ের কাজে লাগাতে হয়।
মাটি
যেকোনো ধরনের মাটিতেই কুলের সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। কুলগাছ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। তবে ভারি ও সামান্য ক্ষারযুক্ত বেলে দো-আঁশ মাটিতে কুলের ভালো ফলন পাওয়া যায়।
জমি তৈরি
বাগান আকারে চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো। তাছাড়া বাড়ির আনাচে-কানাচে, পুকুর পাড়ে বা আঙিনায় পড়ে থাকা অনুর্বর মাটিতেও গর্ত করে চাষ করা যায়।
রোপণ
বাগান আকারে চাষের জন্য বর্গাকার রোপণ প্রণালি অনুসরণীয়। রোপণ দূরত্ব ৬-৭ মিটার। জাত ও স্থানভেদে দূরত্ব কম-বেশি হবে। চারা রোপণের মাসখানেক আগে ১*১*১ মি আকারের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।
সময়
মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র এবং মধ্য-শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্র রোপণ করা যায়।
সার
চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে ইউরিয়া ২০০-২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০-২৫০ গ্রাম, এমপি ২৪৫-২৫৫ গ্রাম, পচা গোবর ২০-২৫ কেজি হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা
শুষ্ক মৌসুমে বিশেষত ফুল ও ফল ধরার সময়ে মাসে একবার সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চারাগাছ (বীজের বা কলমে) হলে প্রথম বছর গাছটির কাঠামো মজবুত করার জন্য গাছের গোড়া থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার উঁচু পর্যন্ত কোনো ডালপালা রাখা যাবে না। এর উপরে শক্ত-সামর্থ কিছু শাখা-প্রশাখা গাছের অবস্থা অনুযায়ী রাখতে হবে। যেন ডালপালা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
ছাঁটাই
ছাঁটাইয়ের সময় শক্ত-সামর্থ শাখাগুলোর গোড়া থেকে না কেটে কিছু অংশ রেখে অগ্রভাগ কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া দুর্বল, রোগ ও কীট দৃষ্ট ও ঘনভাবে বিন্যস্ত ডালগুলো গোড়া থেকে কেটে পাতলা করে দিতে হবে। নতুন যে ডালপালা গজাবে সেগুলোও বাছাই করে ভালো ডালগুলো রেখে দুর্বল ডাল কেটে ফেলে দিতে হবে। বয়স বাড়র সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি গাছের জন্য সার দিতে হবে-
প্রয়োগ
সার বছরে ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ফল ধরা, ফল সংগ্রহ ও বর্ষার পর সার প্রয়োগ করা ভালো। সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দেওয়া উচিত।
ফল সংগ্রহ
জাত অনুসারে মধ্য-পৌষ থেকে মধ্য-চৈত্র মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। ফলের রং হালকা সবুজ বা হলদে হলে সংগ্রহ করতে হয়। গাছপ্রতি ৫০-২০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
রোগ দমন
কুলের পাউডারি মিলডিউ একটি মারাত্মক রোগ। এতে ফলন হ্রাস পায়। ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। গাছের পাতা, ফুল ও কচি ফল এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল ও ফল গাছ থেকে ঝরে যায়। গাছের পরিত্যক্ত অংশ এবং অন্যান্য পোষক উদ্ভিদে এ রোগের জীবাণু বেঁচে এবং বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। উষ্ণ ও ভেজা আবহাওয়ায় বিশেষ করে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
গাছে ফুল দেখা দেওয়ার পর থিওভিট নামক ছত্রাকনাশক প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পরবর্তীতে ১৫ দিন পর পর দু’বার স্প্রে করতে হবে।
এসইউ/আইআই