কমলা উৎপাদন করবেন যেভাবে
নাস্তার টেবিলে ফল হিসেবে কমলার বিকল্প নেই। ফলটি ভিটামিন সি পূরণ করতেও সহায়ক। বাজার থেকে কমলা কেনার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা থাকলে উৎপাদনও করা যেতে পারে। আসুন জেনে নেই কমলা উৎপাদনের নিয়মাবলী-
চারা
যৌন ও অযৌন পদ্ধতিতে কমলার বংশ বিস্তার করা যায়। কমলার বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। কমলার একটি বীজ থেকে একাধিক চারা পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে সতেজ ও মোটা চারাসমূহ অযৌন চারা বা নিউসসেলার চারা হিসেবে পরিচিত। গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড়া কলমের মাধ্যমে অযৌন চারা উৎপাদন করা যায়। কমলা উৎপাদনের জন্য অযৌন চারা উত্তম।
জমি
জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমি তৈরির পর ৩*৩ মি দূরত্বে ৬০*৬০*৬০ সেমি আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের মাটি তুলে পাশে রেখে দিতে হবে। বর্ষার আগে গর্ত মাটি দিয়ে ভর্তি করে রাখতে হবে। কমলা চাষের নির্বাচিত জমি পাহাড়ি হলে সেখানে ৩০-৩৫ মিটার দূরত্বে ২-৪টি বড় গাছ রাখা যেতে পারে। তবে বড় গাছ কাটলে শেকড়সহ তুলে ফেলতে হবে। তারপর পাহাড়ের ঢালু অনুসারে নকশা তৈরি করে নিতে হবে।
রোপণ
চারা লাগানোর ১২-১৫ দিন আগে প্রতিগর্তে নির্ধারিত হারে সার মাটির সাথে কোদাল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে রাখতে হবে। প্রধানত মধ্য-বৈশাখ থেকে মধ্য-ভাদ্র (মে থেকে আগস্ট) মাসের মধ্যে চারা রোপণ করতে হবে। চারা মাটির বলসহ গর্তে লাগাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন চারাটি গর্তের মাঝে থাকে। কলমের চারার জোড়া স্থানটি মাটি থেকে ১৫ সেমি উপরে রাখতে হবে। চারার গোড়ার মাটি যেন সামান্য উঁচু থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সার
ভালো ফলন পেতে হলে কমলা গাছে সার প্রয়োগ করা দরকার। মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র (ফেব্রুয়ারি-মার্চ), বর্ষার আগে মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল থেকে মে) এবং বর্ষার পরে মধ্য ভাদ্র-মধ্য কার্তিক মাসে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা রোপণের ৩-৪ মাস পর গাছপ্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি গাছের জন্য সারের পরিমাণ নিম্নরূপ হবে-
মাটির উর্বরতা এবং গাছের অবস্থার ওপর বিবেচনা করে সারের পরিমাণ কমবেশি করা যেতে পারে।
সেচ
চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে বৃষ্টির পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রেখে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ছাঁটাই
চারা অবস্থায় কমলা গাছের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গোড়া থেকে অতিরিক্ত জন্মানো শাখা কেটে ফেলতে হবে। নিচের দিকে ছোট ছোট শাখা ছেটে ভূমি থেকে অন্তত ৪৫ সেমি ওপর থেকে কাণ্ডের উৎপাদনশীল শাখা বাড়তে দেওয়া যেতে পারে। মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল মাঝে মাঝে ছেটে দিতে হবে। গাছের গঠন ছোট থেকেই সুন্দর ও শক্ত করে তুলতে হবে।
আগাছা
আগাছা বেশ ক্ষতি করে। গাছের গোড়ায় যাতে আগাছা জন্মাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাছের ওপরে পরগাছা ও লতাজাতীয় আগাছা থাকলে তা দূর করতে হবে।
ফসল
কমলা গাছে সাধারণত মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র (ফ্রেব্রুয়ারি থেকে মার্চ) মাসে ফুল আসে এবং মধ্য-কার্তিক থেকে মধ্য-পৌষ (নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর) মাসে ফল পাকে। ফলের রং কিছুটা হলদে হলে তা সংগ্রহ করা যায়।
রোগ-বালাই
পাতা ছিদ্রকারী পোকা: সাদা পোকা কচি পাতার নিম্নতলে আঁকা-বাঁকা দাগের সৃষ্টি করে। এর আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রতিকার: ১০ মিলি মেটাসিস্টক্স ১০ লিটার পানিতে অথবা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪ চা চামচ মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে।
বাকল ছিদ্রকারী পোকা: পোকা গাছের বাকলে ঢুকে খেতে থাকে এবং আক্রান্ত বাকল শুকিয়ে ডাল বা কাণ্ড মারা যায়।
কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা: পোকা গাছের কাণ্ড বা ডাল ছিদ্র করে ভেতরে খেয়ে গাছ দুর্বল করে ফেলে। আক্রমণ বেশি হলে ডাল বা কাণ্ড শুকিয়ে মারা যায়।
প্রতিকার: রিপকর্ড ১০ ইসি কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি বা ২ চা চামচ মিশিয়ে স্প্রে করে পোকা দমন করা যায়।
কমলা গান্ধী: ফলের গায়ে ছিদ্র করে রস চুষে খায়। মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য-কার্তিক মাসে যখন ফল পুরো রসালো হয় তখন এ পোকার উপদ্রব শুরু হয়। এতে ছিদ্রস্থান কয়েকদিন পর হলদে হয়ে ফল ঝরে যায়।
প্রতিকার: ম্যালাথিয়ন ০.০৪% অথবা সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৫ চা চামচ মিশিয়ে স্প্রে করলে এ পোকা দমন হয়।
গ্রীনিং রোগ: গ্রীনিং রোগাক্রান্ত গাছের পাতা হলদে রং ধারণ করে। শিরা দুর্বল, পাতা কিছুটা কোঁকড়ানো, পাতা ছোট হয় এবং সংখ্যা কমে আসে। সাইলিড নামক পোকা দিয়ে এ রোগ সংক্রমিত হয়। রোগাক্রান্ত গাছের ডাল দিয়ে কলম করলে নতুন গাছের এ রোগ দেখা দেয়।
প্রতিকার: নগস ১০০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৪ চা চামচ মিশিয়ে স্প্রে করলে সাইলিড পোকা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং এ রোগ কমে আসে।
ক্যাংকার রোগ: এ রোগে ফল ও পাতা আক্রান্ত হয়।
প্রতিকার: এ রোগ হলে ফল, পাতা কেটে ফেলতে হবে এবং মাঝে মাঝে বর্দোমিকচার ছিটিয়ে রোগ দমন করতে হবে।
এসইউ/আইআই