৫ লাখ ৪১ হাজার কৃষককে ৫৮ কোটি টাকার প্রণোদনা
সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১০টি ফসলে ৫ লাখ ৪১ হাজার ২০১ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ১৯ হাজার ৩১৫ টাকার প্রণোদনা দেবে সরকার।
প্রণোদনা হিসেবে কৃষকরা গম, ভুট্টা, সরিষা, চীনা বাদাম, গ্রীষ্মকালীন তিল, গ্রীষ্মকালীন মুগ, খেসারি, মাসকলাই, ফেলন, বিটি বেগুন উৎপাদনে বীজ ও রাসায়নিক সার (ডিএপি ও এমওপি) পাবেন।
রোববার সচিবালয়ে আসন্ন মৌসুমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এ কথা জানান।
এ প্রণোদনার কারণে ৭২৭ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকার অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে দাবি করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রণোদনা কার্যক্রমে ব্যয়ের তুলনায় আয় হবে ১২ গুণ।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে মাসকলাই, গম, ভুট্টা, সরিষা, চীনা বাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটি বেগুন ও পরবর্তীতে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও তিলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ৬৪টি জেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে পরিবারপ্রতি সর্বোচ্চ ১ বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৭ হাজার ৭৮০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের পুনর্বাসনে ৯০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
এদের মধ্যে কলার ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরিতে ৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৬০ টাকা, নাবী জাতের রোপা আমন ধানের বীজ বিতরণে ৩ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং নাবী জাতের রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরি, চারা উত্তোলন ও বিতরণে ৮০ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি প্রণোদনার উদ্দেশ্য তুলে ধরে মতিয়া চৌধুরী বলেন, এর মাধ্যমে ১০টি ফসল আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা, আবাদের এলাকা বৃদ্ধি ও ফসলগুলোর হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি বলেন, এই প্রণোদনা কার্যক্রমের অর্থ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ থেকে সংকুলান করা হবে। এ জন্য সরকারের কোনো অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না।
কোন ফসলে কতজন কৃষককে প্রণোদনা
কৃষিমন্ত্রী বলেন, গমের ক্ষেত্রে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৮৭ হাজার ২৫০ জন, ভুট্টার ক্ষেত্রে ১ লাখ ৪০ হাজার ১৫০ জন, সরিষার ক্ষেত্রে ২ লাখ ৯ হাজার ৯০০ জন, চীনা বাদামের ক্ষেত্রে ৭ হাজার ২০০ জন, গ্রীষ্মকালীন তিলের ক্ষেত্রে ২২ হাজার ৫০০ জন, গ্রীষ্মকালীন মুগের ক্ষেত্রে ৩৯ হাজার ৯০০ জন, খেসারির ক্ষেত্রে ৯ হাজার জন, মাসকলাইয়ের ক্ষেত্রে ২০ হাজার ৩০০ জন, ফেলনের ক্ষেত্রে ৩ হাজার জন ও বিটি বেগুনের ক্ষেত্রে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ২ হাজার ১ জন।
কোন ক্ষেত্রে কি পরিমাণ প্রণোদনা
কৃষিমন্ত্রী জানান, এক বিঘা জমির জন্য গমের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ২০ কেজি বীজ, ভুট্টার ক্ষেত্রে ২ কেজি বীজ ও সরিষার ক্ষেত্রে ১ কেজি বীজ, চীনা বাদামের ক্ষেত্রে ১০ কেজি বীজ, গ্রীষ্মকালীন তিলের ক্ষেত্রে ১ কেজি বীজ, গ্রীষ্মকালীন মুগের ক্ষেত্রে ৫ কেজি বীজ, খেসারির ক্ষেত্রে ৮ কেজি বীজ, মাসকলাইয়ের ক্ষেত্রে ৫ কেজি বীজ, ফেলনের ক্ষেত্রে ৭ কেজি বীজ ও বিটি বেগুনের ক্ষেত্রে ২০ গ্রাম বীজ কৃষককে দেওয়া হবে।
এছাড়া গম, ভুট্টা, গ্রীষ্মকালীন তিল ও সরিষার ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার, গ্রীষ্মকালীন মুগের ক্ষেত্রে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার এবং বিটি বেগুনের ক্ষেত্রে ১৫ কেজি ডিএপি ও ১৫ কেজি করে এমওপি সার পাবেন প্রত্যেক কৃষক।
চীনা বাদাম, খেসারি, মাসকলাই ও ফেলনে প্রত্যেক কৃষক ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিসচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহারসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এসআর/আইআই