বিনা চাষে আলুর ফলন পেতে
কখনো কখনো কোল্ড-স্টোরেজ সংকটে পড়ে অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায়। তারপর সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষের খরচও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে খরচ কমিয়ে চাষ করার পদ্ধতিও আছে। অনেক পতিত জমিও আসবে চাষের আওতায়।
কোন অঞ্চল
যেসব এলাকা নিচু এবং বর্ষার পানি নামতে দেরী হয়; সেখানে বিনা চাষে আলুর ফলন পেতে পারেন।
কেন করবেন
এর ফলে খরচ কম হয়। কারণ কচুরিপানাকে মালচিং দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করে মাটির রস সবসময় সংরক্ষণ করা য়ায়। সেচ খরচ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। অনেক কম রাসায়নিক সার দরকার হয়। জমিতে আগাছা কমে যায়। আলু বেশি সুস্বাদু হয়। আলুর আকারও অনেক বড় হয়।
> আরও পড়ুন- বাংলাদেশে আঙুর উৎপাদন সম্ভব!
জমি নির্বাচন
এভাবে চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে; যেখানে বৃষ্টিপাত হলে পানি জমে না। সাধারণত উচ্চ ফলনশীল এবং স্থানীয় জাতের ধান কাটার পর জমি ফাঁকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলু চাষের সুযোগ হয়। কাছাকাছি নদী বা পুকুরে কচুরীপানার উৎস থাকতে হবে।
কখন করবেন
নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত এ আলু চাষের উপযুক্ত সময়। তবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত বিরনা পদ্ধতিতে আলু চাষ সম্ভব।
বীজ ব্যবস্থাপনা
হিমাগারে সংরক্ষিত অনুমোদিত কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ইত্যাদি জাত ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি শতকে ৬-৮ কেজি বীজের দরকার হয়। ২৫-৩০ গ্রাম ওজনের ছোট আলু বা বড় আলুর কমপক্ষে দুই চোখ বিশিষ্ট কাটা অংশই আলুর বীজের জন্য ভালো। কাটা অংশে ছাই লাগিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
> আরও পড়ুন- ড্রাগন চাষে ভাগ্য বদল
রোপণ পদ্ধতি
রোপণের আগে বীজ অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নেওয়া ভালো। ২০ ইঞ্চি দূরে সারি করে ১০ ইঞ্চি দূরে প্রতিটি বীজ আঙুলের চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। যদি মাটি কিছুটা শক্ত হয়, তবে হাত লাঙল টেনে ১০ সেন্টিমিটার গভীর করে নালায় বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা
বীজ রোপণের আগে শতক প্রতি ১.৩ কেজি ইউরিয়া এবং আধা কেজি টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। আগের দিন পটাশ ও গোবর সার মিশিয়ে ছিঁটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের সময় বীজের গায়ে যেন কোনভাবেই রাসায়নিক সার না লাগে।
আচ্ছাদন
কচুরিপানা, খড়, নাড়া ইত্যাদি আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নদী বা খাল থেকে কচুরীপানা তুলে রেখে দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে শুকালে সেটি আচ্ছাদন হিসেবে ভালো। খড় বা নাড়াকে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করলে ইঁদুরের আক্রমণ বাড়তে পারে। বীজ আলু লাগানোর পরপরই ৪-৬ ইঞ্চি পুরু করে আচ্ছাদন দিতে হবে। বীজ আলু সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত হতে হবে। না হলে আলুর গায়ে সবুজ মেলানিনের দাগ পড়ে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার আচ্ছাদন বেশি হলে গাছ বের হতে সমস্যা হয়।
> আরও পড়ুন- কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে মাতাল কালীগঞ্জ
পরিচর্যা
পোকায় চারাগাছ কেটে দেয় এবং ছিদ্র করে ফসলের ক্ষতি করে। এই পোকা দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা গাছের কাছাকাছি মাটি খুঁড়ে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। উপদ্রব বেশি হলে ক্লোরোপাইরিফস ২০ ইসি ৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর এটা করা দরকার। বাড়িতে সংরক্ষিত আলুতে সুতলি পোকা লম্বা সুড়ঙ্গ করে। পরে এটি অন্য আলুর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
করণীয়
বাড়িতে আলু সংরক্ষণের সময় ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সংরক্ষণের আগে আক্রান্ত আলু বাছাই করে ফেলে দিতে হবে। জাবপোকা গাছের রস চুষে খায় এবং ভাইরাস রোগ ছড়ায়। প্রতি ৭ দিন পর ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ মিলিলিটার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। উড়চুঙ্গা রাতে গর্ত থেকে বের হয়ে গাছের শেকড় ও কাণ্ড খেয়ে ফেলে। বিষটোপ ব্যবহার করে অথবা গর্ত থেকে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে।
আলুর মড়ক
লেট ব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ হলে প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ছোট ভেজা দাগ পড়ে। পড়ে এটি বড় হয়ে পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে পুরো ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ক্ষেতে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় যেন ফসল পুড়ে গিয়েছে। এর থেকে প্রতিকারের জন্য সুষম সার এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোভরাল অথবা ডাইথেন এম-৪৫, ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
> আরও পড়ুন- পেয়ারার শত্রু ছাতরা পোকা
সম্ভাব্য ফলন
এভাবে রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন আলু পাওয়া সম্ভব। স্বাভাবিকভাবে আলু চাষ করার চেয়ে বিনা চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খরচ প্রায় তিন চতুর্থাংশে নেমে আসে।
এসইউ/আইআই