নওগাঁয় ৮ বছরে বিপুল পরিমাণ বাগান সৃজন
নওগাঁ জেলায় গত ৮ বছরে বিপুল পরিমাণ বাগান সৃজন করা হয়েছে। বন বিভাগের উদ্যোগে জেলার ১১টি উপজেলায় সামাজিক বনায়নের আওতায় এই বাগান সৃজন করা হয়। এসব বাগান ও গাছের পরিচর্যা করে উপকারভোগীরা অর্জন করেছেন লাখ লাখ টাকা। জেলায় মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ উপকারভোগী ১৫ হাজার ২৪৯ জন এবং নারী ৩ হাজার ৪৮৯ জন।
জেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সংযোগ সড়ক, গালিজ বাগান, বাঁধ বাগান (স্ট্রিপ) সৃজন করা হয়েছে ১ হাজার ৮২২ কিলোমিটার। এসব বাগানের উপকারভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৮৭৭ জন ও নারী ১ হাজার ৬৯৪ জন।
আম বাগানে চারা রোপণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪৬৪টি। এর উপকারভোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৯৭০ জন এবং নারী ৯২৫ জন। খয়ের বাগানে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৭৫০টি। এসব বাগানের উপকারভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬৫ জন এবং নারী ২৪৫ জন।
লাক্ষা বাগানে মোট চারা রোপিত হয়েছে ৩৫ হাজার ২৫০টি। এ বাগানে উপকারভোগীর সংখ্যা মোট ৬৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭৩ জন এবং নারী ১২২ জন। উডলট বাগান সৃজিত হয়েছে মোট ১৮১ দশমিক ৫০ হেক্টর। এখানে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯২৯ জন এবং নারী ২৭৮ জন।
চর বাগান সৃজিত হয়েছে ১৩৭ দশমিক ৩৩ হেক্টর। এসব চর বাগানে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫শ’ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৮০ জন এবং নারী ১২০ জন। বাঁশ বাগান সৃজিত হয়েছে ১৮১ হেক্টর। বাঁশ বাগানের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৪৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৪০ জন ও মহিলা ৫০ জন।
মোট বেত বাগান সৃজিত হয়েছে ৮৪ হেক্টর জমিতে। এসব বেত বাগান পরিচর্যা করেন মোট ২৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২শ’ জন ও মহিলা ৫০ জন।
কৃষি বন বাগান মোট ৮ হেক্টর সৃজন করা হয়েছে। এই বাগানে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ জন ও মহিলা ৫ জন। এছাড়াও জেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে এনরিচমেন্ট বাগান সৃজন করা হয়েছে।
এসব উপকারভোগীর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ১ হাজার ৫৮২ জন উপকারভোগী তাদের অংশের লভ্যাংশ পেয়েছেন মোট ৯ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৮ টাকা। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে নওগাঁ জেলা দেশের মধ্যে পর পর ৫ বার শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
ধামইরহাট উপজেলার চকচান্দিরা গ্রামের গৃহবধূ হামিদা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উপকারভোগী হিসেবে বন বিভাগের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫শ’ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন। একই গ্রামের দরিদ্র ইসহাক আলী পেয়েছেন ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এর আগে তিনি ২০১০-১১ অর্থবছরে পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
ধামইরহাট বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের গাছের ছোট-বড় প্রায় ২শ’টি বাগান রয়েছে। সরকারি বেদখল হওয়া ৪৫২ একর জমি উদ্ধার করেছেন। এছাড়া ৫৬২ কিলোমিটার রাস্তায় বনায়ন করেছেন। উপজেলার ১৪ হাজার ভূমি দখলকারীকে তিনি বদলে দিয়ে উপকারভোগীতে পরিণত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলার সিলিমপুর এলাকায় কঞ্চি কলম পদ্ধতিতে এক প্লটে ২৬ একর জমিতে বাঁশ বন আছে। এছাড়া আত্রাই নদীর ধারে প্রায় ২শ’ একরে গড়ে ওঠা খাসজমিতে শাল, জারুল, বহেড়া, আমলকি, ডুমুর, অর্জুন, জাম, ইপিল ইপিল বাগান রয়েছে। বনভূমি গড়ে ওঠার কারণে এই এলাকাগুলো এখন বন্যপ্রাণির আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।’
জেলার বন কর্মকর্তা এ কে এম রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা এবং তাঁরই দিকনির্দেশনায় দেশের চাহিদা মোতাবেক বনায়ন সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলায় এই ব্যাপক সাফল্য। আগামীতে আরো বৃক্ষ রোপণ করা হবে।’
আব্বাস আলী/এসইউ/আরআইপি