কীভাবে লালশাক চাষ করবেন
লালশাক একটি জনপ্রিয় খাবার। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কমবেশি লালশাক চাষ হয়। লালশাক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। দেশের অনেক জায়গায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লালশাক চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। বেকারত্ব দূর করতে নারী বা পুরুষ নিজের জমিতে অথবা বর্গা নেওয়া জমিতে লালশাক চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
পুষ্টিগুণ
লালশাকে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
জাত
১. আমাদের দেশে ‘বারি লালশাক-১’ জাতের শাক চাষ ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।
২. এ শাকের পাতার বোটা ও কাণ্ড নরম ও উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।
৩. প্রতি গাছে ১৫ থেকে ২০টি পাতা থাকে।
৪. গাছের উচ্চতা ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১০-১৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
৫. এ শাকের ফুলের রং লাল এবং বীজ গোলাকার হয়।
৬. বীজের উপরিভাগ কালো ও কিছুটা লাল দাগ মেশানো থাকে।
জমি তৈরি ও বীজ বপন
১. লালশাক চাষের আগে জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ও মাটির অবস্থা বুঝে ৪-৬টি চাষ ও মই দিতে হবে।
২. লালশাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। তবে সারিতে বীজ বপন করা সুবিধাজনক।
৩. এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
৪. একটি কাঠি দিয়ে ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর লাইন টেনে সারিতে বীজ বুনে মাটি সমান করে দিতে হবে।
জলবায়ু
সারাবছরই লালশাক চাষ করা যায়। তবে শীতের শুরুতে লালশাকের ফলন বেশি হয়।
মাটির প্রকৃতি
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সারাবছর ‘বারি লাল শাক-১’ এর চাষ করা হয়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি লালশাক চাষের জন্য উপযোগী।
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে, গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লালশাক চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পঁচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরাপাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পঁচা সার তৈরি করা সম্ভব।
পরিচর্যা
১. বীজ গজানোর এক সপ্তাহ পর প্রত্যেক সারিতে ৫ সেন্টিমিটার পর পর গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
২. নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
৩. জমির উপরের মাটিতে চটা হলে নিড়ানি দেওয়ার সময় তা ভেঙে দিতে হবে।
বাজার সম্ভাবনা
লালশাক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই ছোট-বড় সবাই এই শাক খুব পছন্দ করে। যেহেতু এর চাহিদা সবার কাছেই আছে তাই লালশাক চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। লালশাক রপ্তানি করার জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
মনে রাখবেন, উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় ৫শ’ কেজি লালশাক পাওয়া যায়।
এসইউ/পিআর