ভোলার চরাঞ্চল
তরমুজের বাম্পার ফলনে ব্যাপক লাভের আশা কৃষকের

ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ বছরও তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচও কিছুটা কমেছে। ক্ষেতগুলোতে তরমুজের সমারোহে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। তাই তরমুজ বিক্রি করে বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। তবে কৃষকদের দাবি, চরাঞ্চলেই তরমুজ চাষ করে তারা সফলতা পান বেশি।
সদর উপজেলার ভেলুমিয়ার ইউনিয়নের রাবেয়ার চর, ভেদুরিয়ার ইউনিয়নের চর চুটকিমারা ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চর মুন্সি ও চর ভৈরাগীসহ বিভিন্ন চরে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোলার ৭ উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ বছরও তরমুজ চাষ হয়েছে। বিগ ফ্যামিলি, থাই সুপার, ড্রাগন সুপার, ড্রাগন কিংসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজের চাষ করেছেন কৃষক। তবে এ বছর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত বছরের চেয়ে ব্যাপক ফলন হয়েছে। কৃষকেরা হাসি মুখে তরমুজ তুলে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ শেষ সময়ে তরমুজের ক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর বাজারে বিক্রি করে বেশি লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ভেলুমিয়ার ইউনিয়নের রাবেয়ার চরের তরমুজ চাষি ও চরফ্যাশন উপজেলার আহমেদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক মো. মাহাবুব আলম জানান, চরাঞ্চলের জমিগুলো পলি মাটির। বর্ষার সময়ে জোয়ার-ভাটায় তলিয়ে যায় চরগুলো। বর্ষার শেষে আবার জেগে ওঠে। এই জোয়ার-ভাটার কারণে জমিগুলোতে পলি মাটি আসায় তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ফলনও ভালো হয়। এ ছাড়া নদীর র্তীরবর্তী হওয়ায় ঠান্ডা আবহাওয়া চাষের জন্য উপযোগী থাকে। এতে রোগবালাই ও আক্রমণ কম থাকে। তাই চরাঞ্চলের কৃষকেরা তরমুজ চাষ করে সফল হন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, এ বছরও তিনি চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করেছেন। এবার ভেলুমিয়ার রাবেয়ার চরে প্রায় ৩ কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হওয়ায় খুশি তিনি।
বিজ্ঞাপন
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাহাবুদ্দিন ফরাজি জানান, তিনি প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করেন। প্রতি বছরই সদর উপজেলার চরাঞ্চলে চাষ করেন। এ বছর রাবেয়ার চরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করে ৪০ একর জমিতে চাষ করেছেন। ক্ষেতে তেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। বাজারের যে দাম আছে, তাতে তরমুজ বিক্রি করে প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
মনির হোসেন জানান, তিনি প্রায় ৭-৮ বছর ধরে বিভিন্ন চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করেন। প্রতি বছরই আলাদা আলাদা চরে চাষ করেন। এবার ৩ কানি জমিতে চাষ করতে গিয়ে জমি লগ্নি, বীজ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের বেতনসহ ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত একবার সাড়ে ৭ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এখনো ক্ষেতে যে তরমুজ আছে, তাতে আরও ৮-৯ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চর মুন্সির তরমুজ চাষি মো. নাসিম ও মো. আলাউদ্দিন জানান, তারা প্রতি বছরই বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করেন। ক্ষেতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে তারা অনেক খুশি। তাই আশা করেন, এ বছর তরমুজ বিক্রি করে বেশি লাভবান হবেন।
বিজ্ঞাপন
তারা জানান, আগে কয়েক বছর ওপরের জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। ক্ষেতে রোগবালাই ও পোকমাকড়ের আক্রমণে কোনো বছর লোকসান হতো আবার কোনো বছর উৎপাদন খরচ উঠে কিছু টাকা লাভ হতো। পরে প্রায় ২০ বছর ধরে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিনের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করে যাচ্ছেন। এতে প্রতি বছরই ভালো লাভবান হচ্ছেন। আগামী বছর প্রায় ৫০ একর জমিতে চাষ করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজ ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। কৃষকেরা এ বছর গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি টাকা লাভবান হবেন। এতে আগামী বছরগুলোতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে তরমুজ চাষ করবেন। আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন। যার কারণে এবার কৃষকদের উৎপাদন খরচও বাড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর ভোলার ৭ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের ১৩ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ৯২৫, বোরহানউদ্দিনে ৮৩০, দৌলতখানে ৯৫, তজুমদ্দিনে ২৬০, লালমোহনে ৭০০, চরফ্যাশনে ১০ হাজার ৭৮০ ও মনপুরায় ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
এসইউ/জিকেএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন