ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

কম খরচে বেশি লাভ

দেড় মাসের মধ্যে ঘরে উঠবে স্বপ্নের ফসল সয়াবিন

কাজল কায়েস | প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২৫

সয়াল্যান্ড খ্যাত মেঘনা উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলার বিস্তীর্ণ চরে এখন সয়াবিনের সবুজ পাতায় কৃষকের সোনালি স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। ক্ষেতে পাতা, ফুল আর থোকায়-থোকায় সয়াবিনে সবুজের সমারোহ। আর এক-দেড় মাসের মধ্যে ঘরে উঠবে তাদের কাঙ্ক্ষিত সোনার ফসল। এ নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন চলছে।

আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এ জনপদে হয়। চলতি বছর উৎপাদিত সয়াবিন থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। ফসল ঘরে উঠলে চর ও সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ জনপদগুলো অর্থনৈতিকভাবে চাঙা থাকে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এদিকে কৃষকদের ভাষ্যমতে, সয়াবিন আবাদে কম পানি প্রয়োজন হয়। এটি লবণাক্ত জমিতেও হয়। ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে সয়াবিনে কম খরচ, লাভ বেশি। এতে দিন দিন তারা সয়াবিন চাষে ঝুঁকছেন।

দেড় মাসের মধ্যে ঘরে উঠবে স্বপ্নের ফসল সয়াবিন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে। জেলার ৪টি উপজেলার ৪৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সবুজ পাতায় দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। অসময়ে বৃষ্টি না হলে এবার প্রত্যেক কৃষকের ঘরে উৎসবের আমেজ থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চর কাচিয়া, চরলক্ষ্মী, চরবাদাম ও চর আলী হাসানের অন্তত ৩০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে মাটিতে বোরো ধানের আবাদ সম্ভব নয়; সেখানে সয়াবিন চাষ করা হয়। এ ছাড়া ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি, সয়াবিনে খরচ কম। অন্যান্য ফসল আবাদে মাটির শক্তি হ্রাস পায়, সয়াবিন চাষে উর্বরতা বাড়ে। সয়াবিনের জমিতে অন্য ফসলও ভালো হয়। ধানের চেয়ে সয়াবিনের দাম বেশি। প্রায় ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় প্রতি মণ সয়াবিন।

বিজ্ঞাপন

আবাদ করা জমিতে সর্বোচ্চ দুবার করে সার-কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তবে ধান চাষে আরও বেশি লাগে। এ ছাড়া আগাছা পরিষ্কারের জন্য গাছের চারা ছোট অবস্থায় একবার নিড়ানি দিলেই হয়। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মাঝেমাঝে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। এতে জলবায়ু ও লবণাক্ত সহনশীল এবং স্বল্প জীবনকালের সয়াবিনের জাত চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ২ মেট্টিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়। এতে এবার আবাদ করা ৪৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮৮ হাজার মেট্টিক টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলার সবচেয়ে বেশি সয়াবিন উৎপাদন হয় রামগতি ও কমলনগরে। এর মধ্যে রামগতিতে ১৭ হাজার ও কমলনগরে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। এ ছাড়া সদরে ৭ হাজার ৫০০ ও রায়পুরে ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। গত মৌসুমে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন হয়। এবার ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল।

বিজ্ঞাপন

সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের কৃষক নুর আলম বলেন, ‘সয়াবিন চাষে বীজ বপনের আগে একবার ও গাছে ফুল আসার সময় একবার সার দিতে হয়। এ ছাড়া অবস্থা বুঝে কীটনাশক প্রয়োগ করলেই চলে।’

রায়পুরের চরলক্ষ্মী গ্রামের ফিরোজ আলম বলেন, ‘সয়াবিনের জমিতে পানি সেচ লাগে না। এটি লাভজনক হলেও অতিবৃষ্টির ঝুঁকি আছে। ক্ষেতে পানি জমে গেলে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যায়। তখন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সয়াবিন চাষ করলে ধানের চেয়ে লাভ বেশি। খরচ ও পরিশ্রম কম।’

দেড় মাসের মধ্যে ঘরে উঠবে স্বপ্নের ফসল সয়াবিন

বিজ্ঞাপন

রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, ‘সয়াবিন ঘরে তুলতে আরও এক-দেড় মাসের মতো সময় লাগবে। এখন বৃষ্টি হলে ফসলের জন্য ভালো হতো। কীটনাশক প্রয়োগে কিছু কৃষক পরামর্শ না শোনায় তাদের ক্ষেতের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘সয়াবিনকে ঘিরে এখানে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোও ঋণ দেয়। চরের মানুষের জীবনমান বদলে যাচ্ছে। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে জেলায় পরিকল্পিতভাবে সয়াবিননির্ভর শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। এখানে প্রশাসনও উদাসীন।’

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, ‘উপকূলীয় জমিতে লবণ আছে। অন্য ফসল লবণাক্ততা সহ্য করতে না পারলেও সয়াবিন তা পারে। বেশি লবণাক্ত জমি যে কোনো ফসলের জন্য ক্ষতিকর। আমরা কৃষকদের সয়াবিনের উন্নত জাত সরবরাহ করি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বীনা ৫, বীনা ৬, বারি ৪, বারি ৬, বিইউ ৩, বিইউ ৪, বিইউ ৫ জাতের সয়াবিনের দানা বড়, ওজন বেশি। তাই ফলনও বেশি। এগুলো পানি ও জলবায়ু সহনশীল। আগাম ঝড় থেকে রক্ষা পায়। বর্তমানে সয়াবিনের জীবনকাল কমিয়ে আনা হয়েছে। কৃষকেরা যাতে আগেভাগেই বীজ বপন করেন। তাহলে দ্রুত সময়ে সয়াবিন কাটতে পারবেন।’

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন