আব্দুল করিমের বাগানে হলুদ মাল্টার হাসি
যশোরে মাল্টা চাষের পথপ্রদর্শক আব্দুল করিমের বাগানে হলুদের সমারোহ। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা হলুদ মাল্টার বাগানে প্রবেশ করলে থমকে দাঁড়াতে হয়। মনে হয়, বিদেশের কোনো বাগানে ঢুকে পড়েছেন! চমক জাগানিয়া এই দৃশ্যপট যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের। এই গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল করিম চাষ করেছেন বারি-১ জাতের মাল্টা। মাত্র আড়াই বছরেই মাল্টা উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি।
আব্দুল করিমের এই পথ সহজ ছিল না। প্রায় এক যুগ আগে মুরগি পালন, কেঁচো সার উৎপাদনসহ নানা কাজে ব্যর্থ হয়ে সর্বস্বান্ত হন। দেনার দায়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেসময় মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়ের প্রেরণায় কৃষি বিভাগের শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় ১ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক বারি মাল্টা-১ জাতের গাছের চারা রোপণ করেন। ক্ষেতে ১৭০টি চারা রোপণের পর শুরু করেন নিবিড় পরিচর্যা। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচর্যা শুরু করেন গাছগুলোর। ফল পেতে শুরু করেন ২ বছর পর।
আব্দুল করিম বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ধার-দেনা করে মুরগি পালনসহ নানা কাজ শুরু করি। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পুঁজি হারিয়ে দেনার দায়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এক পর্যায়ে উপজেলার তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরিচয় হয়। তিনি মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। লিজকৃত ২০ শতক জমিতে মাল্টা চাষ শুরুর ২ বছরে গাছে ফল ধরা শুরু হয়। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এরপর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাল্টার কলম আর ফল কেনার অর্ডার আসতে থাকে। বছর তিনেক আগে হলুদ মাল্টা চাষের স্বপ্ন পেয়ে বসে। তাই লিজ নেওয়া আরও ৫ বিঘা জমিতে হলুদ মাল্টার চারা রোপণ করি। এতে আড়াই বছর পরই গাছে ফল আসে। হলুদ মাল্টা চাষের পাশাপাশি ডেনমার্কের মাল্টা চাষ করেও সফল হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশীয় বারি-১ জাতের হলুদ মাল্টা রসে ভরপুর। স্বাদ ও মানে অতুলনীয়। গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। প্রতি গাছে ৪০-৪৫ কেজি ফল পাই। পাইকারি প্রতি কেজি মাল্টা ১৩০ টাকা দরে প্রায় ২২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। আরও ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি।’
এক সময়ের পুঁজি হারানো আব্দুল করিমের মাল্টা বাগানে ২৫-৩০ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিদেশ থেকে ফল আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। তাতে দেশীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন তিনি।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, ‘মণিরামপুরে মাল্টা চাষের উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। আব্দুল করিম এই মাল্টা চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার ফলন দেখে আশপাশের এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষি বিভাগও তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে।’
মিলন রহমান/এসইউ/জেআইএম