শসার বাম্পার ফলন ও ভালো দামে খুশি চাষিরা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এবার শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের প্রতিটি ক্ষেতে প্রচুর শসা উৎপাদন হয়েছে। কৃষকেরা সেই শসা তুলে সরবরাহ করছেন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়া এবার সবজির দামও বেশ ভালো। ফলে পাহাড় ও সমতলের ক্ষেত থেকে শসা সরবরাহ করে স্বচ্ছল হচ্ছেন অন্তত ৭২০ জন চাষি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে এবার বিভিন্ন পাহাড় ও সমতল ভূমির ৪০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে। এসব জমিতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। ফলে কৃষকেরা এসব শসা তুলে পাইকারদের মাধ্যমে সরবরাহ করছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অন্যদিকে এবার সবজির দামও বেশ চড়া। ফলে কৃষকরা শসা বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতে শসার চাষ বেশ ভালো হওয়ায় চাষিরাও খুশি। কথা হয় উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের খাদেমপাড়া গ্রামের কৃষক মো. শিবলুর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতি বছর এ মৌসুমে নানারকম সবজির সঙ্গে প্রচুর শসা চাষ করে থাকেন। চলতি মৌসুমে তিনি ৮০ শতক পাহাড়ি জমিতে শসা চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে সবজিও উৎপাদন হয়েছে বেশ ভালো।
মো. শিবলু বলেন, ‘জমি চাষ করতে বীজ, সার, বাঁশ, শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্নভাবে খরচ পড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবার সবজির দাম ভালো পাচ্ছি। প্রথমে প্রতি কেজি শসা পাইকারিতে ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি করছি। এ হিসেবে এখনো পর্যন্ত বিক্রি করেছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমি থেকে আরও লক্ষাধিক টাকার শসা বিক্রি করতে পারবো।’
শসা চাষ করে লাভবান হওয়ার কথা জানান বাড়ৈয়াঢালা পাহাড়ের চাষি মো. সালাম। তিনি বলেন, ‘শসা সবজি হিসেবে প্রায় সব মানুষেরই প্রিয়। এ কারণে এর চাহিদাও ভালো। এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এখন বাজারে শসার চাহিদার সাথে দামও তুঙ্গে। শুরুতে প্রতি কেজি পাইকারিতেই ৫০-৬০ টাকা। এখন ৪০-৪৫ টাকা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের লাভ হচ্ছে ভালোই।’
তিনি বলেন, ‘আমি পাহাড়ে ৬০ শতাংশ ও সমতলে ৪০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছি। চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ফলন তোলা শুরুর পর থেকে গত ১ মাসে বিক্রি করেছি প্রায় ২ লাখ টাকা। বাজারদর এরকম থাকলে আরও দেড় লক্ষাধিক টাকার সবজি বিক্রি হতে পারে। এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা শসাসহ অন্য সবজি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।’
বাড়ৈয়াঢালা ইউনিয়নের লালানগর গ্রামের চাষি মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘চাষাবাদ করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই কৃষি অফিসারদের পরামর্শ নিই। তাদের পরামর্শ মেনে চাষ করলে পোকামাকড় মোকাবিলা করেও ভালো লাভ পাওয়া যায়। এখন জমিতে আগের তুলনায় কীটনাশক ব্যবহার কমেছে। এখন পোকা নিধনের ফেরোমন ফাঁদ ও নানারকম প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করছি। ফলে সবজি স্বাস্থ্যকর হয়।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সর্বমোট ৪০ হেক্টর জমিতে ৭২০ জন কৃষক শসা আবাদ করেছেন। পাহাড়ি জমি ও সমতল ভূমিতে শসা চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। এসব শসা স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করছে। ভালো বিষয় হলো, এখন কৃষকেরা আগের মতো কীটনাশক ব্যবহার করছেন না। পোকা নিধনে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। ফলে সবজিগুলো স্বাস্থ্যকর হচ্ছে। আগামীতে শসা চাষ আরও বাড়বে।’
এসইউ/এএসএম